ইউক্রেনে পাশ্চাত্যপন্থীরা ক্ষমতায় থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পাশ্চাত্যপন্থী রাজনীতিবিদরা যতদিন ইউক্রেন শাসন করবে ততদিন দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের অবসান হবে না। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে শনিবার জি২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

ভ্লাদিমির পুতিনপুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনের শাসনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সংঘাতের অবসান চান না। তার ভাষায়, ‘ইউক্রেনের বর্তমান কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাত অবসানে আগ্রহী নয়। তারা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন সংঘাত চলবে।’

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, গত সপ্তাহে আজোভ সাগর থেকে আটক ইউক্রেনের তিন জাহাজ ও এর নাবিকদের মুক্তির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন চেষ্টা না চালায়। আলোচনা করে তাদের মুক্ত করা যাবে না। আদালতে বিষয়টির নিস্পত্তি হতে হবে।

গত ২৫ নভেম্বর ক্রিমিয়া উপকূলে রাশিয়ার পানিসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগ এনে ইউক্রেনের তিন জাহাজ জব্দ করে মস্কো। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পূর্বপরিকল্পিত বৈঠক বাতিল করেন।

এদিকে ইউক্রেনের কাছ থেকে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে শিগগিরই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক পরিচালক ওলেক্সি মাকেয়েভ আল জাজিরা’কে বলেছেন, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত শুধু ইউক্রেনের জন্যই বিপজ্জনক নয়, বরং এটি পুরো কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের জন্যই বিপজ্জনক।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্রিমিয়ায় তারা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য নতুন এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে।

কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের তিনটি জাহাজ জব্দ করার ঘটনায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার মধ্যেই দখলকৃত ক্রিমিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেয় মস্কো।

রবিবার রাশিয়া ইউক্রেনের বারডিযানস্ক এবং নিকোপল যুদ্ধজাহাজ এবং দি ইয়ানা কাপা জাহাজ জব্দ করে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া জাহাজের পথ আটকাতে চেষ্টা করে, যদিও এরপর নৌযানগুলো কের্চ স্ট্রেইটের উদ্দেশ্যে চলছিল কিন্তু ট্যাংকার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া রুশ বাহিনীর গুলিতে জাহাজে থাকা ৬ সেনা আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইউক্রেন। আর রাশিয়ার অভিযোগ, নৌযানগুলা অবৈধভাবে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছিল এবং নিরাপত্তার কারণে ওই পথে চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। এ ঘটনার পর রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের পাশাপাশি ইউরোপেরও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আর রাশিয়ার এমন আচরণের পর দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে ইউক্রেন। ২৮ নভেম্বর থেকে ৩০ দিনের জন্য সামরিক শাসনও জারি করা হয়েছে দেশটিতে।

২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে দখলে নিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ক্রিমিয়াতে সামরিকায়ন করে চলেছে রাশিয়া। বুধবার সেখানে রুশ নৌবাহিনীর মাইনসুইপার জাহাজও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানে অবস্থান করা এক রুশ সাংবাদিক।

রুশ বার্তা সংস্থাগুলো ‍দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ভাদিম আস্তায়েফকে উদ্ধৃত করে জানায়, চলতি বছরের শেষেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে।

ক্রিমিয়ায় ইতোমধ্যে রাশিয়ার তিন ব্যাটালিয়ন বিমান প্রতিহতকারী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন ব্যবস্থা মোতায়েনের মাধ্যমে সমুদ্রে নিজের কর্তৃত্ব আরও জোরদার করবে মস্কো। সূত্র: পার্স টুডে, আল জাজিরা।