রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে ইইউ’র বাড়তি ৪৭ কোটি টাকার তহবিল

 

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে আরও ৫ মিলিয়ন ডলারের বাড়তি তহবিল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৫ টাকা। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

এর আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

১০ ডিসেম্বর সোমবার ইউরোপিয়ান কমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজকের এই বাড়তি অর্থায়নের মধ্য দিয়ে এটি আবারও পরিষ্কার হয়েছে। খাদ্য সহায়তা অবশ্যই জরুরি। এই সংকটে আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া রাষ্ট্র বাংলাদেশ উভয়ের পাশে রয়েছি।

ইউরোপিয়ান কমিশনের মানবিক সহায়তা ও সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টোস স্টাইলিয়ানিডস বলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সাহায্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাড়তি তহবিল তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দেবে। এই তহবিল শরণার্থী শিবিরজুড়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অস্থায়ী আবাসন নিশ্চিত করবে। তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের স্থানীয় সম্প্রদায়েরও সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।noname

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশ পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তখন থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ইউরো তহবিল সরবরাহ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

১৯৯৪ সাল থেকে কক্সবাজারে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউ’র মানবিক ত্রাণ তৎপরতায় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা, পরিচ্ছন্ন পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা, স্বাস্থ্য সেবা এবং অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকে প্রতিনিয়ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো ভুয়া প্রচারণা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞে উসকানি দিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালাতে ৭০০ কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছিল দেশটির সেনাবাহিনী। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ সংক্রান্ত ১৩টি পেজ ও ১০টি অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।noname

ফেসবুকে বিনোদনমূলক ও তথ্যমূলক পেজের ছদ্মবেশে রোহিঙ্গাবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কয়েক বছর আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসব পেজে দেওয়া পোস্টে বলা হতে থাকে, ‘ইসলাম বৌদ্ধ ধর্মের জন্য বৈশ্বিক হুমকি’। তাছাড়া এক মুসলিম পুরুষ কর্তৃক এক বৌদ্ধ নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার বানোয়াট গল্পও ছড়ানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। এমন অনেক বিদ্বেষমূলক পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে এসব পেজে।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের 'বাঙালি মুসলমান' আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় নেপিদো। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর দেশটির বাসিন্দা হিসেবে রোহিঙ্গাদের যে সবুজ ও গোলাপি পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তা গুরুত্বহীন হয়ে যায় ৮২ সালের নতুন নাগরিকত্ব আইনে। মিয়ানমারের ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার নৃগোষ্ঠীভিত্তিক নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করে। বিতর্কিত ওই বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। আইনের ৪ নম্বর ধারায় শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কিনা, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। বস্তুত এই আইনটিই জান্তাশাসিত মিয়ানমারে সর্বোচ্চ সেনাবিদ্বেষের শিকার রোহিঙ্গাদের ভাসমান জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করে।সূত্র: রিলিফ ওয়েব, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।