সিরিয়ায় বিরোধীদের সম্পত্তি জব্দ করছে আসাদ সরকার

সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে ভিন্নমতালম্বী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি জব্দ করছে সিরিয়ার সরকার। মানবাধিকার গ্রুপ ও ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির যেসব এলাকায় সরকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে সেসব এলাকাতে এসব সম্পত্তি জব্দের ঘটনা ঘটছে।noname
সাত বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে এখন সিরিয়ার বেশ কয়েকটি বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সরকার। ২০১১ সালে যেসব এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সেসব এলাকা তিনি এখন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তার ওপর মনোযোগ বেড়েছে। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ বিরোধীদের শক্তঘাঁটিগুলোতে থাকা বিরোধীদের দমন করতে সরকার ‘ল ১০’ নামে পরিচিত একটি আইন ব্যবহার করতে পারেন বলে ধারণা করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ওই আইন এখনও কার্যকর করা হয়নি। তবে আলাদা সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে এরইমধ্যে সম্পত্তি জব্দ করা হচ্ছে। মানবাধিকার গ্রুপগুরো বলছে, এমন ব্যক্তিদেরও সম্পত্তি জব্দ করা হচ্ছে যাদের সহিংসতায় কোনও হাত নেই।

সরকার বিরোধী প্রাথমিক বিক্ষোভে যোগ দেওয়া এক প্রকৌশলী তার বাড়ি, অফিস, গাড়ি এবং ঘৌটায় তার কৃষিজমি হারিয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় সিরিয়ার এই অধিবাসী অনলাইনে সরকার বিরোধী বিভিন্ন উপকরণ অনলাইনে শেয়ার করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, আমি এক এক করে আমার বাড়ি বানিয়েছি। খালি হাতে আমি এর প্রতিটা কোনা এবং প্রতিটা ইঞ্চি বানিয়েছিলাম। এপ্রিলে ঘৌটার আত্মসমর্পনের পর বর্তমানে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবে বসবাস করেন তিনি।

ওই প্রকৌশলী প্রথমে জানতে পারেন সরকারের এক নিরাপত্তা আদেশে তাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। তখন নিরাপত্তা আদেশের জের ধরে প্রকৌশলী ও স্থপতি সিন্ডিকেট তার সদস্যপদ স্থগিত করে আর তার পেনশন বাতিল করে।

প্রথম দিকে আসাদ বিরোধী মিছিলে যোগ দেন তিনি তবে তার দাবি কখনও অস্ত্র হাতে তুলে নেননি তিনি। এমনকি পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটায় স্থানীয় সরকারেও কোনও ভূমিকা রাখেননি তিনি। গত এপ্রিলে আসাদ অনুগত সেনারা ঘৌটার নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখল করে।

২০১৬ সালে নিজের গাড়ি বিক্রির চেষ্টা করেন ওই প্রকৌশলী। ‘দামেস্কের দালাল আমাকে জানালো নিরাপত্তার কারণে আমার, আমার সহযোগী, স্ত্রী, এবং সন্তানদের সব সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। টাকার প্রয়োজন পড়ায় পরিবারটি ওই সময়ে গাড়ির কয়েকটি অংশ ৭৯৬ মার্কিন ডলারে বিক্রি করে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আত্মসমর্পণ চুক্তি অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটার হাজার হাজার বাসিন্দার সঙ্গে ইদলিবে চলে আসার সময়ে বাড়ি, অফিস আর কৃষিজমি ফেলে আসেন তারা।

প্রাথমিকভাবে আদেশের মাধ্যমে এসব সম্পত্তির স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। যাতে মালিকেরা তা বিক্রি বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে। যখন জব্দ করা হবে তখন তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে সরকার।

ঘৌটার দৌমা শহর ছেড়ে এপ্রিলে তুরস্কে পালিয়ে আসা এক চিকিৎসক বলেছেন তার বাড়ি, ক্লিনিক, জমি এবং গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।  তিনি বলেন, সিরিয়ার শাসক সব বিরোধী অ্যাকটিভিস্টকে টেরোরিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করে সম্পত্তি জব্দ করছে।

মানবাধিকার গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, রাজনৈতিক ভিন্নমতালম্বী এবং বিরোধীদের শাস্তি দিতে সিরিয়ার সরকার বহু আইন ব্যবহার করে সম্পত্তি জব্দ করেছে।  আদালতের আদেশে সম্পত্তি জব্দের শিকার হওয়া ভিন্ন মতালম্বীদের তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। তবে এসব তালিকা পূর্ণাঙ্গভাবে যাচাই করতে না পারলেও কয়েকটি ঘটনা খতিয়ে দেখে সত্যতা পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সিরিয়ার দুটি মানবাধিকার গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে তারা বহু ঘটনা যাচাই করে দেখেছে।  গ্রুপ দুটি বলছে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পত্তি জব্দের শিকার হওয়া ৩২৭ ব্যক্তিকে নথিভুক্ত করেছে তারা।  এছাড়া আরও অনেক ঘটনা সম্পর্কে জানলেও আক্রান্তরা মুক্তভাবে কথা বলতে না পারায় তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তবে শান্তিপূর্ণ ভিন্নমতালম্বীদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে দামেস্ক।