দ. এশিয়ায় শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন বাড়ছে

 ২০১৭ সালে ভারতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ২৪ লাখেরও বেশি শিশু। কলকাতায় অনুষ্ঠিত যৌন নিপীড়ন বিষয়ক এক বৈশ্বিক সম্মেলনে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশ নেন ১৫টি দেশের বিচারক ও প্রসিকিউটররা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ছয় দেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারাও।

Captureপ্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত এই উদ্যোগে উপস্থিতি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন ও  পশ্চিমবঙ্গের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক কমিশনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের নারী কমিশনের প্রধান, ইন্টারপোল কর্মকর্তারা। 

ভারত ও অন্যান্য দেশে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ইন্টারপোলের প্রতিনিধি সেসিলা ওয়ালিন। তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ চক্র ও অন্যান্যরা প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে। তারা আইনি প্রক্রিয়া ফাঁক দিয়ে পারও পেয়ে যাচ্ছে। এসময় তিনি এই সংখট সমাধানে সবদেশের পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়িয়ে বৈশ্বিক একটি কার্যকরী কৌশল বের করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বেশিরভাগ দেশেই এই অভিযোগে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় না। এতে করে অপরাধীরা পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। পশ্চিমবঙ্গের শিশু সুরক্ষা ও অধিকার বিষয়ক কমিশনের কর্মখতা বলেন, শিশুদের যৌন নিপীড়ন, বিক্রি ও পাচার রোধে বৈশ্বিকভাবে কাজ করতে হবে। পাচারকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই প্রচলিত আইনে তাদের আটক করা কঠিন। আর প্রযুক্তির উন্নয়নে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে গেছে। পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে আর অপরাধীরা শক্তিশালী হয়েছে।

সম্মেলনে বলা হয়, সব দেশেই সামাজিক ও দাফতরিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নাগরিক দায়িত্বের পরিবর্তন আনতে হবে। বেশিরভাগ দেশেই সচেনতনতা চালানো হলেও সেটা বেশি প্রয়োজন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কারণ সেখানেই শিশুরা বেশি অনিরাপদ।

ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশনের প্রতিনিধি সাজি ফিলিপ বলেন, ভারতে ৮০ শতাংশ মেয়ে ১৪ বছরের কম বয়সেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। কলকাতায় কয়েকটি এনজিওর প্রতিনিধিরাও বলেন, তারা কমিশনের কার্যক্রমের সন্তুষ্ট না।  তাদের একজন বলেন, ২৪ লাখ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ সব নিপীড়নের অভিযোগ আসে না।

অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, ভারতে জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী শিশুদের বিরুদ্ধে যে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৭৬ টি অভিযোগ এসেছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। অন্যান্য রাজ্য তাদের প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দিলেও রাজনৈতিক কারণে সেটা করেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

মানবাধিকার বিষয়েও পশ্চিমবঙ্গের রেকর্ড ভালো বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা দাবি করেন,  দিল্লি থেকে বেশ কয়েকবার চাপ প্রয়োগ করা হলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন আসেনি।

এই সংকট মোকাবিলায় ভারতীয় সরকরের পদক্ষেপে বিস্তিম হয়েছেন বক্তারা। বর্তমান গতিতে ২০১৪ সালে করা মামলা ২০২২ সালের আগে সেগুলো সমাধা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও আশঙ্কা তাদের।  বিশেষ করে অরুণাচল ও গুজরাটে শিশু নিপীড়নের মামলা ৫৫ থেকে ১০১ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায় মীমাংসা হতে। এজন্য দায়ী করা হয় অপর্যাপ্ত বিচারক, প্রসিকিউটর ও পুলিশ সদস্যদের।

তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় ফাস্ট ট্রাক আদালতের কারণে কিছু সুফল পাওয়া যাচ্ছে। পরিকল্পিত ৬৬৫টি আদালতের মধ্যে ৫৫৯টিই এখন নির্মাণাধীন। শুধু কলকাতাতেই এখন ৪০জন হাইকোর্ট বিচারক প্রয়োজন যেন দ্রুতগতিতে কেসগুলো শেষ হয়ে যায়। পুরো ভারতে পুলিশ প্রয়োজন ৫ লাখেরও বেশি।

শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধমুলক আইনের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৫১ শতাংশ অভিযোগ বেড়েছে। ২০১২ সাল থেকে এই আইন কার্যকর হতে শুরু করে। এই অপরাধীরা প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তারা ও রাজনীতিবিদদের সুরক্ষায় থাকেন।

বাংলাদে  ও নেপালেও পরিস্থিতি খুব সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছিলে কলকাতার বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, নেপালে অভিযোগ করা খুবই কঠিন। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। নরওয়ের এক এনজিও জানায়, দেশটিতে সম্প্রতি ১৪৭ টি যৌন নিপীড়ন ও ৭৩টি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে আর এই সবগুলো পরিবারের মধ্যে।

বাংলাদেশের চিত্রও অনেক ভারতের মতো। ভারতের মতো তারাও যৌন নিপীড়নের অপরাধীদের সাজা দিতে বদ্ধ পরিকর। কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনাও হয়েছে।

বক্তারা বলেন, তবে ভারত ও নেপালের ক্ষেত্রে শিক্ষার অভাব ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে শিশুদের বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ঢাকায় শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করা অনেক মেয়েই নিপীড়নের শিকার হয় যার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। নেপাল ও বাংলাদেশে মেয়েরা পাচারের শিকার হয়। তাদের বেশিরভাগকেই ভারত কিং মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়। ভারত থেকেও আরব দেশের পাচার করা হয়ে মেয়ে শিশুদের। 

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, উগান্ডা ও কেনিয়ার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।