মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ চায় ২৩ রোহিঙ্গা সংগঠন

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ২৩ রোহিঙ্গা সংগঠন। রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি নেপিদোর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আওতায় নিয়ে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করা হয়েছে বিবৃতিতে।

রোহিঙ্গা
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে দেখে। জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সমান্তরাল মনে করা হয় না। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটি কোনও বিচারযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত নয়। আনুষ্ঠানিক বিচার নিশ্চিতের স্বার্থেই রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ২৩ সংগঠন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও শুরু থেকেই রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি কোনও মন্তব্যই করেননি। অক্টোবরে প্রকাশিত মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির এক বিশেষ অনুসন্ধান থেকে এর নেপথ্য কারণ সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এখনই মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করার কথা ভাবছে না মার্কিন প্রশাসন। সে কারণেই সেনাবাহিনীর নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তারা।

২৩ রোহিঙ্গা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিলে তা ‘আংশিক সত্য’ হয়। ‘এ ঘটনাকে একটি স্বচ্ছ আইনি ভিত্তি দেওয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের, যা সম্ভব হবে ‘গণহত্যা’ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। অক্টোবরে জাতিসংঘের সত্য অনুসন্ধানী মিশনের সভাপতি কর্তৃক রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যা আখ্যা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে ২৩ সংগঠনের বিবৃতিতে। পাশাপাশি অক্টোবর জাতিসংঘের সত্য অনুসন্ধান মিশনের সভাপতি মারজুকি দারুসমানের বক্তব্য ও এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল’ অ্যান্ড পলিসি গ্রুপ (পিআইএলপিজি) এর প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিধনকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী কোনও জাতি, সম্প্রদায় বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিসাধনের জন্য পরিকল্পিতভাবে ওই গ্রুপের সদস্যদের টার্গেট বানিয়ে মেরে ফেলা, অথবা তাদের শারীরিক-মানসিক ক্ষতিসাধন, সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, জোরপূর্বক বাচ্চাদের স্থানান্তর গণহত্যা বিবেচিত হয়।’ সেপ্টেম্বরের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই প্রতিবেদনে যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচারণা শুরুর বিষয়টি উঠে এসেছিল। তা সত্ত্বেও একে গণহত্যা অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সাব্যস্ত না করে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো দাবি করেছে, তাদের একাংশের অনুসন্ধানেও রোহিঙ্গা নিপীড়নে ‘গণহত্যা’র পরিষ্কার আলামত মিলেছে। বিবৃতির শেষ অনুচ্ছদে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আর সে দেশের বিবেকবান জনগণের পদক্ষেপ কামনা করা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপনের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।