ইসলামকে শাসক দলের মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে চীন। সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে 'সমাজতন্ত্র' নামে ডেকে থাকে। ২০১৮ সালের মার্চে পার্টির গঠনতন্ত্রে স্থান পায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিং পিন-এর মতবাদ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ইসলামকে শি'র 'নতুন শতাব্দীর জন্য চীনা ধারার সমাজতন্ত্র' নামের পার্টির মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে বেইজিং। শুক্রবার সরকারি কর্মকর্তারা ‘আটটি ইসলামী সংস্থা’র সঙ্গে বৈঠকের পর ‘চীনা ঘরানার সমাজতন্ত্রের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নতুন আইন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ওই ৮ ‘ইসলামী সংস্থা’র নাম না জানালেও তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকে উভয় পক্ষই ‘ইসলামকে সমাজতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত করা এবং চীনা ঘরানা অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে একমত হয়েছে’।
২০১৭ সালের অক্টোবরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর চিন্তাকে দলীয় গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। ‘নতুন শতাব্দীর জন্য চীনা ধারার সমাজতন্ত্র’ নামে তার চিন্তাধারা দলীয় গঠনতন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় সেই চিন্তাধারা অনুযায়ীই চীনের একদলীয় শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। এ বছর মার্চে পার্টির দলীয় সম্মেলনে সংবিধান সংশোধনীর মধ্য দিয়ে চীনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের পিপলস পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত ২ মেয়াদের অবসান ঘটানোর মধ্য দিয়ে তার আজীবন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রবল ক্ষমতার অধিকারী সেই শি জিং পিন-এর মতাদর্শে শাসিত চীনে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে আটক রেখে তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বলপূর্বক তাদের কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে নিজ ধর্মের সমালোচনা করতে তাদের ওপর জবরদস্তি করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের শপথ করতে হচ্ছে বস্তুবাদে বিশ্বাসী ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্যের যা ইসলামের বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেই ধারাবাহিকতায় এবার শি জিং পিন-এর সরকার ইসলামকে তাদের কথিত সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আল জাজিরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের এ পদক্ষেপ মুসলমানদের ধর্ম চর্চায় নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
আগে থেকেই চীনের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ রয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। গত আগস্টে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বিশ্ববাসী চীনে মুসলিমবিরোধী ক্যাম্পেইন এড়িয়ে যেতে পারে না। তবে চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্ম ও সংস্কৃতির সুরক্ষা দিচ্ছে। সরকারিভাবে এমন দাবি করলেও শুধু গত সপ্তাহেই মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ইউনান প্রদেশে তিনটি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, চীনের সংখ্যালঘু হুই জাতিগোষ্ঠীর মুসলমানরা মসজিদগুলোর নির্মাণ করেছিল।