ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেই সমাধান দেখছে ইইউ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যুক্তরাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে শিগগিরই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন সংস্থাটির নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থেকে যাওয়াকেই একমাত্র সমাধান মনে করছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক।

প্রতীকী ছবি
২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সেই ব্রেক্সিট পরিকল্পনার খসড়াকে চুক্তি হিসেবে অনুমোদনের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়  নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স। চুক্তির পক্ষে ২০২ জন আর বিপক্ষে ৪৩২ জন ভোট দেওয়ায়  ২৩০ ভোটের ব্যবধানে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

ব্রেক্সিট পরিকল্পনার প্রস্তাব পাস না হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের মুখপাত্র বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির ফল নিয়ে আমরা হতাশ। আমরা সম্মানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন আমাদের যতো দ্রুত সম্ভব তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হয়।’

পার্লামেন্টে থেরেসা মে
মঙ্গলবারের ভোটাভুটিতে পার্লামেন্ট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলে তিন দিনের মধ্যে বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ পাবেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের বিশাল পরাজয়ের পর থেরেসার বিকল্প প্রস্তাব পাসের ব্যাপারেও আশা দেখা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে হাঁটতে হবে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের (নো ডিল ব্রেক্সিট) পথে। তবে, পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিরোধী অংশ খুব সহজে তা হতে দিতে চান না। কোনও চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার বিরোধিতাকারী এমপিরা ৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বাজেটে সরকারকে কর সংক্রান্ত যে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার পরিবর্তে পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপরিহার্যতা আনার পক্ষে ভোট দেন। এমন অবস্থায় ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক  পরোক্ষভাবে যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । এক টুইটার বার্তায় টাস্ক লিখেছেন: ‘চুক্তির অনুমোদন পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে গেছে। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটকেও কেউ সমর্থন দিতে চাচ্ছে না। তাহলে একমাত্র ইতিবাচক সমাধান কোনটি তা শেষ পর্যন্ত সাহস করে কে বলতে পারে?’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কারও মঙ্গলবারের ভোটাভুটির ফল নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ব্রিটেনকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, ‘সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।’ জাঙ্কার আরও বলেন, পরবর্তী সম্পের্কর রুপরেখা সংক্রান্ত কোনও চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে। একে ‘তথাকথিত বিশৃঙ্খলাপূর্ণ প্রত্যাহার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। জাঙ্কার জানান, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় কমিশন। ইইউ’র ব্রেক্সিট সংক্রান্ত প্রধান আলোচক মাইকেল বার্নিয়ের বলেছেন, ব্রেক্সিট প্রশ্নে সংশয়ী ব্রিটিশ এমপি ও ভোটারদের কাছে চুক্তির গ্রহণযোগ্য বাড়াতে থেরেসা মে যদি ইইউ’র কাছ থেকে ছাড় চান, তখন জোটটি ‘ঐক্যবদ্ধ থাকবে’।