অস্ট্রেলিয়ার আটক কেন্দ্রে থাকা অভিবাসন প্রত্যাশীর সাহিত্য পুরস্কার জয়

অস্ট্রেলিয়ার সাহিত্য জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ‘ভিক্টোরিয়ান প্রাইজ ফর লিটারেচার’ জিতে নিলেন এক অভিবাসন প্রত্যাশী। বেহরুজ বুচানি নামের ওই অভিবাসন প্রত্যাশী একজন ইরানি কুর্দি। ২০১৩ সাল থেকে বন্দি ছিলেন পাপুয়া নিউ গিনির মানুস দ্বীপের শরণার্থী আটক কেন্দ্রে। অস্ট্রেলিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত বিতর্কিত আটক কেন্দ্র এটি। আর সে আটক কেন্দ্রে বসে বসেই বুচানি লিখেছেন ‘নো ফ্রেন্ড বাট দ্য মাউন্টেনস: রাইটিং ফ্রম মানুস প্রিজন’ শীর্ষক বইটি। ২০১৭ সালে বিতর্কের মুখে মানুস দ্বীপের শরণার্থী আটক কেন্দ্রটি বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আগে থেকে আটক থাকাদেরকে মানুস দ্বীপের বিকল্প বাসস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার অনুমতি নেই তাদের। ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার গ্রহণ করতে মেলবোর্নে যাওয়ার সুযোগ নেই বুচানিরও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

বেহরুজ বুচানি
বিভিন্ন দেশ থেকে নৌকায় করে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারীদের নাউরু কিংবা মানুস দ্বীপের আটককেন্দ্রে পাঠাতো অস্ট্রেলিয়া। এসব আটককেন্দ্রে থাকা শরণার্থীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছিল। তুমুল সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালে বিতর্কিত শরণার্থী আটককেন্দ্রটি বন্ধ করতে একমত হয় অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির সরকার। তবে আটককেন্দ্রটিতে আগে থেকে থাকা ৮০০ শরণার্থীকে নিজেদের দেশে জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানায় অস্ট্রেলিয়া। মানুস দ্বীপেই তাদেরকে অন্য বাসস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

বেহরুজ  বুচানি ইরানে সাংবাদিকতা করতেন। কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে ইরান ছেড়ে ইন্দোনেশিয়ায় যান তিনি। ইন্দোনেশিয়া থেকে নৌকায় করে দুইবার অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন ইরানি কুর্দি বুচানি। প্রথমবারের চেষ্টার সময় নৌকা ডুবে যায় এবং ইন্দোনেশিয়ার জেলেরা বুচানিকে উদ্ধার করেন। এরপর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে আবারও নৌকায় করে যাত্রা শুরু করেন বুচানি। ওই নৌকায় ছিল ৭৫ জন অভিবাসন প্রত্যাশী। অস্ট্রেলীয় নৌবাহিনী নৌকাটিকে আটকে দেয় এবং অন্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি বুচানিকে মানুস আইল্যান্ড আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে মানুস দ্বীপেই আছেন তিনি। সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই তার। তবে তাতে কী? সাহিত্য চর্চা তো আর বাধা মানে না। আটক কেন্দ্রে বসে বসে ফার্সি ভাষায় একটি বই লিখে ফেলেন তিনি। আর হোয়াট’স অ্যাপ ব্যবহার করে টেক্স আকারে তা অনুবাদকের কাছে পাঠানো হয়। ‘নো ফ্রেন্ড বাট দ্য মাউন্টেনস: রাইটিং ফ্রম মানুস প্রিজন’ নামের সে বইটিই এবার পেলো অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সাহিত্য পুরস্কার। পুরস্কার বাবদ এক লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ৭৩ হাজার মার্কিন ডলার) পাবেন বুচানি। ২৫ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার মূল্যের নন ফিকশন প্রাইজও জিতেছে বইটি।

দ্য এজ ডেইলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুচানি বলেন, ‘আমি পুরস্কার প্রাপ্তির এ ঘটনাকে উদযাপন করতে চাই না। কারণ আমি এখনও আমার চারপাশে থাকা লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে দেখছি। আমাদেরকে স্বাধীনতা দিন। আমরা কোনও অপরাধ করিনি। শুধু অভিবাসন প্রত্যাশা করছি।’