অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বন্ধ না করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আহ্বান

বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শনে গঠিত ইউরোপীয় জোট ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এর কার্যক্রম বন্ধ না করতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর পক্ষ থেকে স্বাক্ষরিত বিবৃতি ও চিঠিতে কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদে ওই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। এরইমধ্যে সে মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলে তা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের জন্য কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করবে। এখনও কার্যকরী নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা না থাকা অনিরাপদ কারখানাগুলো থেকে কাজ করানোটা অনেক বেশি ঝুঁকির হবে।

প্রতীকী ছবি
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত জোট হচ্ছে অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ। দেশের তৈরি পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামো,অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন ও সংস্কার কাজ তদারক করে এ জোটটি। ২০১৩ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা ও শ্রমিক সংঘগুলোর মধ্যে ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ নামক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিতে স্বাধীন ও যথাযথভাবে কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনের কথা বলা আছে।

পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তিটি ২০১৮ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যাওয়ার কথা বলে এর স্বাক্ষরকারীরা চুক্তিটির মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়। স্থানীয় এক তৈরি পোশাক কারখানার মালিকের দায়ের করা পিটিশনের ভিত্তিতে সে বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে হাইকোর্ট। ৩০ নভেম্বর নাগাদ চুক্তির মেয়াদ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের মে মাসে হাইকোর্ট এ রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীরা। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সে আপিলের রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

আপিলের রাযকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিবৃতি ও চিঠি দিয়েছে অ্যাকর্ডে স্বাক্ষর দেওয়া বিনিয়োগকারীর। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের সক্ষমতা না হওয়া পর্যন্ত অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ-কে পোশাক শ্রমিকদের জন্য কারখানাকে নিরাপদ রাখার কাজ অব্যাহত রাখার সুযোগ দিতে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

ওই বিবৃতি ও চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ১৯০ বিনিয়োগকারী। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অ্যাকর্ড কর্মসূচির আওতায় থাকা ১৬০০ কারখানায় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের কাজ শেষ করতে ও কষ্টের অর্জনকে ফসকে যেতে না দিতে একটি দৃঢ় ও কার্যকরী অ্যাকর্ড জরুরি।’

পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ১৪ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অধীনে আরসিসি গঠন করে। ইতোমধ্যে আরসিসি’র সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, জনবলও বাড়ানো হয়েছে। কারখানা ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা, বিদুৎ ও অগ্নিনিরাপত্তাসহ উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার এবং আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও যৌথভাবে প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছে।