পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভেনেজুয়েলার পক্ষত্যাগী সেনাসদস্যরা। সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে প্রতিবেশী দেশ কলম্বিয়া আশ্রয় নেওয়া সেনারা শনিবার উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, মাদুরো প্রশাসনের অধীনে নিজ দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা শঙ্কিত।
ভেনেজুয়েলায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটে এ পর্যন্ত শতাধিক সেনাসদস্যের পক্ষত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। এদের বেশিরভাগই শনিবার মাদুরো সরকার ত্রাণবাহী ট্রাকে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পর নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের ঘোষণা দেন।
ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ত্রাণের ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ঠেকাতে প্রতিবেশী ব্রাজিল ও কলম্বিয়া সীমান্তে সড়ক ও ব্রিজগুলো বন্ধ করে দিতে মাদুরো সেনা পাঠানোর পর থেকে দেশটিতে বিদ্যমান উত্তেজনা ভিন্ন রূপ নেয়। এসব ত্রাণের মধ্যে খাবার ছাড়াও ঔষধ সামগ্রী রয়েছে।
ত্রাণবাহী ট্রাক ভেনেজুয়েলায় ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে সরকারবিরোধীরা। তারা সীমান্ত এলাকার রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়েছে। মোড়ে মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর নিক্ষেপ করে তারাও পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। ত্রাণ প্রবেশ নিয়ে সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও শতাধিক মানুষ। কলম্বিয়া সরকারের দাবি অনুযায়ী, শুধু ভেনেজুয়েলা-কলম্বিয়া সীমান্তেই ত্রাণ প্রবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় আহত হয়েছে ২৮৫ জন।
ভেনেজুয়েলার সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণের হুমকির পর ফিরে গেছে পুয়ের্তো রিকো থেকে আসা একটি ত্রাণবাহী জাহাজ। কলম্বিয়া সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাকে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, একটি ট্রাকে আগুন লাগার পর আরেকটি ট্রাক থেকে ত্রাণের বাক্স সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুইদো’র অভিযোগ, সরকারের লোকজনই ট্রাকে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর সাহসী স্বেচ্ছাসেবীরা ট্রাকভর্তি ত্রাণসামগ্রী রক্ষার চেষ্টা করছেন।
কলম্বিয়ায় আশ্রয় নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পক্ষত্যাগী সেনারা বিবিসি’কে জানিয়েছেন, আরও অনেক সেনাসদস্য তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চান। তারা মাদুরো সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিতে চান। সশস্ত্র বাহিনীর ওপর এর একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে।
২৯ বছরের পক্ষত্যাগী এক সেনাসদস্য বলেন, বিপুল সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে সশস্ত্র বাহিনী ভেঙ্গে গেছে। পেশাদার সেনাসদস্যরা এখন ক্লান্ত। আমরা আর ক্রীতদাস হয়ে থাকতে পারি না। আমরা নিজেদের মুক্ত করেছি।
পক্ষত্যাগী এক নারী সেনাসদস্য শনিবার ত্রাণবহর প্রবেশে মাদুরো বাহিনীর প্রতিবন্ধতা তৈরির বিষয়ে বলেন, ‘ভাবছিলাম, আমি নিজ দেশের মানুষের ক্ষতি করতে পারি না।’
এই নারী বলেন, ‘আমার মেয়ে এখনও ভেনেজুয়েলায় রয়েছে। এই মুহূর্তে এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত দিচ্ছে। কিন্তু আমি তার জন্যই এই কাজ করেছি। এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি, কেননা আমি জানি না তারা (সরকারি বাহিনী) তার কী করতে পারে।’
তৃতীয় আরেক পক্ষত্যাগী সেনাসদস্য বলেন, ভেনেজুয়েলার মানুষ রাস্তায় ত্রাণের জন্য যুদ্ধ করছে, এমন দৃশ্য তার জন্য খুবই পীড়াদায়ক। তার ভাষায়, ‘আমার কাছে নিষ্ঠুর ও নিরর্থক মনে হয়েছে। যা কিছু ঘটছে তার জন্য আমি বেদনার্ত।’ সূত্র: বিবিসি।