‘ইশতেহারে’ যা বলেছে নিউ জিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারী

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলা চালিয়ে প্রায় অর্ধশত মানুষ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্রেন্টন ট্যারান্ট তার তথাকথিত ইশতেহারে দাবি করেছে, ‘শ্বেতাঙ্গরা গণহত্যার’ শিকার। ‘মুসলিমদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ’ তৈরি করার কথাও উল্লেখ করেছে সে। তথাকথিত এই ইশতেহারে চরম ডানপন্থী এবং অভিবাসীবিরোধী মনোভাব থাকার কথা লিখেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।untitled-5
ইশতেহারটি পড়ে গার্ডিয়ানের মনে হয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে সহিংস উত্থানের বিষয়ে ট্যারান্টের এক ধরনের আসক্তি রয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, নরওয়ের বন্দুকধারী হত্যাকারী আন্ড্রেস ব্রেইভিকের সঙ্গে তার ‘গভীর যোগাযোগ’ ছিল এবং ব্রেইভিক এই হামলা চালানোর জন্য তাকে ‘আশীর্বাদ’ দিয়েছে। ব্রেইভিক ২০১১ সালে নরওয়েতে হামলা চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করেছিল।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার দুইটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলা হয়। এদের একটি শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক দীন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আল নূর মসজিদ। আরেকটি মসজিদ লিনউডে অবস্থিত। হামলার পর এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন ৪০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিলেন। পরে আরেক সংবাদ সম্মেলনে নিহতের সংখ্যা ৪৯ জনে পৌঁছানোর কথা উল্লেখ করেন দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। এদের  মধ্যে আল নূর মসজিদেই নিহত হয়েছেন ৪১ জন। আর বাকিরা প্রাণ হারিয়েছেন লিনউডের মসজিদে।
সন্দেহভাজন হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের (২৮) জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। মসজিদে হামলা উপলক্ষে সে ৭৪ পাতার একটি তথাকথিত ইশতেহার উপস্থাপন করেছে, তার নাম 'দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট।’ তথাকথিত এই ইশতেহারটিতে যেমন রয়েছে শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যার শিকার হওয়ার মতো ‘উদ্ভট’ দাবি, তেমনি রয়েছে মুসলিমদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরির প্রস্তাব।
পুলিশ এ ঘটনায় এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে নিশ্চিত করেনি সে, অভিযুক্ত ট্যারান্ট কি না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিউ জিল্যান্ডে এক অস্ট্রেলীয় নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে তথাকথিত ইশতেহারের বিষয়ে জানানো হয়েছে। তিনি মনে করেন এটি একটি ‘ঘৃণাবাদী তৎপরতা।’
তথাকথিত ইশতেহারে হামলাকারী নিজের সম্পর্কে বলেছে, ‘আমার ভাষার উৎস ইউরোপীয়। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ইউরোপীয়। আমার দার্শনিক অবস্থান ইউরোপীয়। আমার পরিচয়, আমি ইউরোপীয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার রক্ত ইউরোপীয়।’ লেখক তার পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, সে একটি শ্রমজীবী শ্রেণির নিম্ন আয়ের পরিবারে বেড়ে উঠেছে। তার ভাষ্য, ‘আমি একটা সাধারণ পরিবার থেকে আসা সাধারণ এক শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, যে তার নিজ গোষ্ঠীর মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বাবা-মা স্কটিশ-আইরিশ-ইংলিশ বংশোদ্ভূত। আমার একটা সাধারণ শৈশব কেটেছে, যেখানে বলার মতো কোনও ঘটনা নেই।’ তার দাবি, সে একজন ‘অন্তর্মুখী’ মানুষ, একজন ‘নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদী’ এবং ‘ফ্যাসিস্ট।’
ট্যারান্ট লিখেছে, এই হামলার পরিকল্পনা দুই বছর আগের। নিউ জিল্যান্ড হামলার স্থান হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল না। তিন মাস আগে হামলার জন্য নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চকে বেছে নেওয়া হয়। ‘আমি নিউ জিল্যান্ডে এসেছিলাম সাময়িক সময়ের জন্য, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ নিতে। কিন্তু এখানে এসে আমি আবিষ্কার করি, বিশ্বের অন্য যেকোনও ভালো টার্গেটের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।’
‘আমি বার্তা দিতে চেয়েছিলাম যে বিশ্বের কোনও স্থানই নিরাপদ নয়। আমি সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি এই কারণেই বেছে নিয়েছিলাম যেন ঘটনাটি ব্যাপক প্রচার পায় মানুষের আলোচনায় ও সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পায়।’ ট্যারান্টের ব্যবহৃত অস্ত্রটি ছিল একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।