মুসলিম অভিবাসনকে হামলার জন্য দায়ী করলেন অস্ট্রেলীয় সিনেটর

নিউ জিল্যান্ডে দুই মসজিদে হামলা চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যার ঘটনায় মুসলিম অভিবাসনকে দায়ী করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং। ডানপন্থী এই সিনেটের প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এরপরও কি মুসলিম অভিবাসন ও সহিংসতার মধ্যে যোগসূত্র থাকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকে?’ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, তার এই বক্তব্যের পর শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সমালোচনায় মুখ খুলেছেন।Captureশুক্রবার (১৫ মার্চ) নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার দুইটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলা হয়। এদের একটি শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক দীন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আল নূর মসজিদ। আরেকটি মসজিদ লিনউডে অবস্থিত। দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৯ জনে। এদের মধ্যে আল নূর মসজিদেই নিহত হয়েছেন ৪১ জন। আর বাকিরা প্রাণ হারিয়েছেন লিনউডের মসজিদে।
ফ্রেসার অ্যানিং কুইন্সল্যান্ডের সিনেটর। নিউ জিল্যান্ডের হামলা নিয়ে তার বক্তব্য টুইটারে শেয়ার করেছেন একজন অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক। অ্যানিং ওই টুইটে লিখেছেন, ‘সবসময়ের মতো এই ঘটনার পরেও বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও সংবাদ মাধ্যমগুলো দায় চাপাবে অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ আইন বা জাতীয়তাবাদী আদর্শের সমর্থকদের ওপর। কিন্তু এর সবই অসত্য চর্বিতচর্বণ।’
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এরপরও কি মুসলিম অভিবাসন ও সহিংসতার মধ্যে যোগসূত্র থাকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকে? নিউ জিল্যান্ডের রাজপথ আজ যে রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার জন্য দায়ী অভিবাসননীতি। এর কারণেই মুসলিম চরমপন্থীরা নিউ জিল্যান্ডে ঢোকার সুযোগ পায়।’
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এই বক্তব্যের জন্য সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিংয়ের বিরুদ্ধে ‘চরমপন্থাকে উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। টুইটার বার্তার তিনি বলেছেন,  ‘শোক ও সমবেদনার সময়ে এই অস্ট্রেলীয় সিনেটর সহিংসতা ও চরমপন্থার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। এই বর্ণবাদী লোকটির কারণে অস্ট্রেলীয়রা চরমভাবে লজ্জিত হবেন। তিনি কোনোভাবেই আমাদের অস্ট্রেলীয় বন্ধুদের প্রতিনিধিত্বশীল কেউ নন।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন মন্তব্য করেছেন, ‘এক সহিংস, ডানপন্থী, চরমপন্থী সন্ত্রাসীর দ্বারা নিউ জিল্যান্ডে সংঘটিত হামলার দায় অভিবাসননীতির ওপর চাপিয়ে সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং নিন্দনীয় কাজ করেছেন। এমন মনোভাবের কোনও স্থান নেই অস্ট্রেলিয়ায়; অস্ট্রেলিয়ার সংসদে তো নয়ই।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল লিখেছেন, ‘ফ্রেসার অ্যানিংয়ের মন্তব্য অত্যন্ত ঘৃণ্য। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সংসদের জন্য অসম্মানের কারণ। তিনি অস্ট্রেলীয়দের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সেটাই ঘটাতে চাচ্ছেন যা সন্ত্রাসীরা চায়।’
সন্দেহভাজন হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের (২৮) জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। মসজিদে হামলা উপলক্ষে সে ৭৪ পাতার একটি তথাকথিত ইশতেহার উপস্থাপন করেছে, যার নাম সে দিয়েছে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট।’ তথাকথিত এই ইশতেহারটিতে যেমন রয়েছে শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যার শিকার হওয়ার মতো ‘উদ্ভট’ দাবি, তেমনি রয়েছে মুসলিমদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরির প্রস্তাব।
সেখানে সে নিজের সম্পর্কে বলেছে, ‘আমার ভাষার উৎস ইউরোপীয়। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ইউরোপীয়। আমার দার্শনিক অবস্থান ইউরোপীয়। আমার পরিচয়, আমি ইউরোপীয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার রক্ত ইউরোপীয়।’ আমি একটা সাধারণ পরিবার থেকে আসা সাধারণ এক শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, যে তার নিজ গোষ্ঠীর মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তার দাবি, সে একজন ‘অন্তর্মুখী’ মানুষ, একজন ‘নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদী’ এবং ‘ফ্যাসিস্ট।’