শোক আর শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ করছে নিউ জিল্যান্ড

শোক আর শ্রদ্ধায় ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৫০ মুসল্লিকে স্মরণ করছে নিউ জিল্যান্ড। দেশটির শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা বলছেন, ইতোপূর্বে অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলার কথা শুনেছেন তারা। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তাদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে নৃশংস এক বর্বরতার স্বাক্ষী হলো তাদের দেশ, বিশ্ব মানচিত্রে যার পরিচিতি ‘শান্তির দেশ’ হিসেবে। এ ঘটনাকে তারা দেখছেন সহিষ্ণুতার অবসান হিসেবে। হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট এতোটাই বেপরোয়া ছিল যে, তার হাত থেকে এমনকি রক্ষা পায়নি দুই বছরের শিশুও। তবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা নিয়ে মসজিদের দরজায় ফুলের তোড়া ও কার্ড নিয়ে হাজির হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শোক আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন নিহতদের।

মসজিদে হামলার পরদিন নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে এভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এক নারীহতাহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বড়দের সঙ্গে এসেছিল ছোট্ট শিশুরাও। মসজিদে রেখে যাওয়া কার্ডগুলোর কোনওটিতে শান্তি ও সহিষ্ণুতার বার্তা। কোনওটিতে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদকে রুখে দেওয়ার বার্তা। কোনওটি আবার ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে মেলবন্ধনের।

nonameরাস্তায় চক দিয়ে ভালোবাসার বার্তা লিখেছেন অনেকে। একটি কার্ডে লেখা রয়েছে, ‘খুবই মর্মাহত। আমরা সবাই এমন নই।’ আরেকটি কার্ডে লেখা ‘রুখে দাঁড়াও’। ফুলের তোড়ার সঙ্গে দেওয়া চিরকুটে একজন লিখেছেন, ‘পাশেই আছি। তোমাদের কষ্টগুলো আমাদের সঙ্গে কষ্ট ভাগ করে নাও।’ ক্রাইস্টচার্চের রাস্তায় চক দিয়ে লেখা, ‘ওরা কখনও জিতবে না। ভালোবাসাই বিজয়ী হবে।’noname

এদিকে শুক্রবারের হামলাকে ‘নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি একাত্মতা জানাতে শুধু কালো পোশাকেই সীমাবদ্ধ থাকেননি জেসিন্ডা, প্রকাশে মাথায় ওড়না জড়িয়ে বার্তা দিয়েছেন সম্প্রীতির। বলেছেন, নিউজিল্যান্ড শুধু তাদেরই যারা এই দেশকে নিরাপদ ভাবেন।noname

ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে প্রতি শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গত শুক্রবারটি শুধু এ মসজিদের মুসল্লিদের জন্যই নয়, বরং পুরো নিউ জিল্যান্ডের জন্য ছিল এক অন্ধকার দিন। একে একে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে মুসল্লিদের। মসজিদের বাইরে ফেলে রাখা জুতা আর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।noname

ক্রাইস্টচার্চের মুসলিম নিউ জিল্যান্ডারদের অনেকেই জন্মগতভাবে অন্য কোনও দেশের মানুষ। এদের একটা বড় অংশের জন্ম আফগানিস্তান, ভারত, সিরিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে। সব ভেদাভেদ ভুলে এই আল নূর মসজিদেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেন তারা।

মসজিদে হামলায় নিহতদের একাংশগত শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরাও সেখানে জুমার নামাজ আদায়ের কথা ছিল। তবে তারা প্রবেশের আগেই বন্দুকধারীর তাণ্ডব শুরু হওয়ায় মসজিদের কাছাকাছি পর্যন্ত গিয়ে আর সামনে এগুতে পারেননি তারা।noname

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, যা ঘটেছে তার মর্মবেদনা আমরা উপলব্ধি করছি। এ ধরনের ঘটনা যেহেতু লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে ঘটেছে, তাই আমি আপনাদের বলতে পারি...আমাদের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আসবে। সূত্র: স্টাফ, দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা।