তিন দশকের মাথায় কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণা

দায়িত্ব নেওয়ার ২৯ বছরের মাথায় আকস্মিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতার নাজারবায়েভ। মঙ্গলবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট। ভাষণে এই সিদ্ধান্তকে কঠিন বলে অভিহিত করলেও সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ জানাননি তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, টেলিভিশন ভাষণের পর এক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করে আগামী ৩০ মার্চ দায়িত্ব ছাড়ার কথা জানিয়েছেন নাজারবায়েভ। তিনি জানান, নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের স্পিকার কাসিম-জমারত তোকায়েভ।কাজাখাস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতার নাজারবায়েভ

২০১৫ সালে পঞ্চমবারের মতো পাঁচ বছর মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নাজারবায়েভ। নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার এক মাসেরও কম সময় আগে নিজের সরকারকে বরখাস্ত করেন তিনি। প্রচুর জ্বালানি সম্পদ থাকার পরেও দেশের অর্থনৈতিক ত্বরাণ্বিত না হওয়াকে কারণ দেখিয়ে ৫৩ বছর বয়সী আসকার মমিনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন তিনি।

মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নাজারবায়েভ বলেন, ‘এই বছর আমি দেশের সর্বোচ্চ পদে ৩০ বছর পূর্ণ করবো। স্বাধীন কাজাখ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমার মনে হয় নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের উত্থান দেখাটাই আমার কাজ। সেই নতুন নেতৃত্ব দেশকে পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে’।

১৯৮৯ সাল থেকেই তেল-সমৃদ্ধ কাজাখাস্তানের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন নাজারবায়েভ। তখনও সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল কাজাখাস্তান। কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি। পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কয়েক সপ্তাহ আগে ১৯৯১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। তারপরের নির্বাচনগুলোতে বিপুলভাবে জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনেও প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি।

কাজাখাস্তানের স্থিতিশীলতা ও জাতিগত শৃঙ্খলা বজায় রাখায় নাজারবায়েভ ব্যাপক প্রশংসা পেয়ে থাকেন। তবে ভিন্নমতালম্বীদের দমন ও বিরোধীদের দূরে সরিয়ে রাখার সমালোচনায় রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম হলেও পৃথিবীর নবম বৃহত্তম দেশ কাজাখাস্তান। দেশটির আয়তন প্রায় ২৭ লাখ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে রাশিয়া আর পূর্বে চীনের সীমান্ত থাকা দেশটির তেলের মজুদ একে কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। নাজারবায়েভের পদত্যাগের ফলে গুরুত্বপূর্ণ দেশটিতে প্রভাব বিস্তারে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য বিরোধ সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।