এরদোয়ানের মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে তুরস্ক যাবেন নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে হামলার প্রেক্ষিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের করা মন্তব্যের ‘প্রতিবাদ’ জানাতে চায় নিউ জিল্যান্ড। এ উদ্দেশ্যে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স তুরস্ক যাবেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গত বুধবার (২০ মার্চ)। তার ভাষ্য অনুযায়ী, নিউ জিল্যান্ড তুরস্কে ‘হিসেব বরাবর’ করার জন্য ‘মুখোমুখি দাঁড়াবে।’GettyImages-1130850033-jacinda-ardern-christchurch-terror-march2019-1120শুক্রবার (১৫ মার্চ) নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলা হয়। আল নূর মসজিদ ও লিনউডে অবস্থিত মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫০ জনে উপনীত হয়েছে। হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্ট একজন ‘শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী,’ যে মনে করে ‘মুসলিমদের জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি’ তৈরি করা উচিত এবং শ্বেতাঙ্গরা ‘গণহত্যার শিকার।’ সে তার তথাকথিত ইশতেহারে হামলার বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করেছিল, যেখানে আলাদা করে বলেছিল তুর্কিদের কথা।
আগামী ৩১ মার্চ তুরস্কে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উদ্দেশে বিভিন্ন নির্বাচনি সভায় যোগ দিচ্ছেন এরদোয়ান। এরকম একাধিক সভায় নিজের ‘ইসলামপন্থী’ দল একে পার্টির পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে এরদোয়ান নিউ জিল্যান্ড হামলার বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। গ্যালিপলি যুদ্ধের ১০৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভাতেও গত ১৮ মার্চ এরদোয়ান নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে হওয়া হামলা তুরস্কের বিরুদ্ধে ঘটা বৃহত্তর হামলারই অংশ। তুরস্কের বিরুদ্ধে যে হামলা চালাবে তাকে কফিনের বাক্সে ভরে ফেরত পাঠানো হবে।
গত মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, নিউ জিল্যান্ড যদি সন্দেহভাজন হামলাকারীকে উপযুক্ত শাস্তি না দেয় তাহলে তুরস্ক তাকে শাস্তি দেবে। সেই সভাতে হত্যাকারীর লাইভে প্রচার করা হামলার ভিডিও ফুটেজ ও তার তথাকথিত ইশতেহারের কিছু অংশ উপস্থাপন করেন এরদোয়ান। নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন ক্রাইস্টচার্চ শহরে সাংবাদিকদের বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার্স জরুরি ভিত্তিতে এরদোয়ানের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করবেন। তার ভাষ্য, ‘আমাদের উপ-প্রধানমন্ত্রী তুরস্কে গিয়ে ওইসব মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাবেন। তিনি সেখানে যাবেন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হিসেব বরাবর করার জন্য।’
সমালোচনার প্রেক্ষিতে তুর্কি প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশনের পরিচালক ফাহরেতিন আলতুন বলেছেন, কোন প্রেক্ষিতে কথাটি বলা হয়েছে তা বিবেচনা না করেই এরদোয়ানের সমালোচনা করা হচ্ছে। ‘তুর্কিরা সবসময়ই অ্যানজেকদের (অস্ট্রেলীয় ও নিউ জিল্যান্ডবাসী) অকৃপণভাবে স্বাগত জানিয়েছে। কানাকালের (গ্যালিপলি) স্মৃতির উদ্দেশে এরদোয়ান যা বলেছিলেন তা অতীত ও বর্তমানে তুরস্কের বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন হামলার প্রেক্ষিতে বলেছেন।’
এরদোয়ানের মন্তব্য নিয়ে আগেও সমালোচনা করেছে নিউ জিল্যান্ড। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স তুর্কি কর্মকর্তাদের বলেছেন, এভাবে হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটি দেখানো ‘অন্যায়।’ এর মাধ্যমে বিদেশে থাকা নিউ জিল্যান্ডের নাগরিকরা বিপদাপন্ন হতে পারে। নিউ জিল্যান্ড সফরে যাওয়া তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। পিটার্সের ভাষ্য, ‘অভিযুক্ত নিউ জিল্যান্ডের নাগরিক নয়। এধরনের জিনিস আমাদের দেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করবে। এতে দেশের ভেতরে ও বাইরে থাকা নিউ জিল্যান্ডবাসীর ভবিষ্যৎ ও সুরক্ষা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’