নিউ জিল্যান্ডের মসজিদে হামলা

৮ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি চার বছর বয়সী আলিনের

এরই মধ্যে ৮টি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় আহত চার বছর বয়সী শিশু আলিনের। তবে হামলার আট দিনে এসেও তার জ্ঞান ফেরেনি। বাবার হাত ধরে মসজিদে নামাজ পড়তে এসে হামলার কবলে পড়েছিল আলিন। গুলিবিদ্ধ বাবার সঙ্গে সেও এখন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

noname

১৫ মার্চ (শুক্রবার) ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। হামলায় নিহত অর্ধশত মানুষের মধ্যে শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউয়ের আল নুর মসজিদে হামলায় প্রাণহানি হয় ৪৩ জনের।হামলার দিন বাবা ওয়াসিম আলসাতির সঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছিল তার চার বছর বয়সী শিশুকন্যা আলিন। তবে ঘৃণা থেকে রক্ষা মেলেনি তারও। বর্ণবাদী বিদ্বেষ বন্দুকের গুলি হয়ে আছড়ে পড়েছিল ছোট্ট ওই শিশুর শরীরেও।

সন্দেহভাজন হামলাকী ব্রেন্টন ট্যারান্টের বন্দুকের তিনটি গুলি লেগেছিল  আলিনের শরীরে। আলিনের বাবা ওয়াসিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত আটবার অস্ত্রোপচার হয়েছে তার শিশু কন্যার।   ওয়াসিম বলেন, ‘আমরা তার জন্য প্রার্থনা করছি। এখনও পুরোপুরি জ্ঞান ফেরেনি তার। তার আটটি অপারেশন হয়েছে, আমার হয়েছে সাতটি।’  আলিনের  জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে পুরো পরিবার।

২০১৪ সালে সাথে স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে জর্ডান থেকে নিউ জিল্যান্ডে পাড়ি জমান ওয়সিম। কর্মজীবন শুরু করে রিভাইভ হেয়ারড্রেসিংয়ে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রে অ্যাস্টওড বার্বারিং উৎসবে পুরস্কার জেতেন তিনি। এরপর গত মাসে ওয়াস বারবার্স নামে নিজের ব্যবসা শুর করেন। চার সন্তানের মধ্যে আলিনিই সবার ছোট। সামরেনর মাসেই পাঁচ বছর বয়স হতো তার। ভর্তি হওয়ার কথা ছিলো প্রাইমারি স্কুলে। জর্ডানিয়ান বংশোদ্ভূত আলসাতি বলেন, তিনি নিজে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এতগুলো অস্ত্রোপচারের পর মাত্র তিন মিনিট কথা বলার শক্তি থাকে।

মসজিদে প্রবেশের সময়েই হামলাকারীকে বন্দুক হাতে দেখেছিলেন ওয়াসিম। তিনি নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছেন, ‘আমি দেখলাম সামরিক পোশাক পড়া এক ব্যক্তি বন্দুকে গুলি ভরছেন। কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ের দিকে তাক করেন। আমি তখন বুঝতে পারি যে সে সামরিক বাহিনীর কোনও সদস্য নয়। সেজন্যই আমি না পালিয়ে তার দিকে ছুটে যাই।’ ততক্ষণে ছোট্ট আলিনের শরীরে ২টি গুলি লেগেছে। একটি পিঠে ও আরেকটি পেটের ওপরে। এরপর আরও একটি গুলিত বিদ্ধ হয় তার শরীর।

হামলার একদিন পর হাসপাতালের বিছানা থেকেই এক ভিডিওবার্তায় নিউ জিল্যান্ডসহ বিশ্বের সব শুভাকাঙ্ক্ষীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।তিনি বলেন, ‘এই ভালোবাসার জবাব দেওয়া সম্ভব না। এই ভিডিওর মাধ্যমে জানাতে চাই যে আমি সুস্থ আছি। ইশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন।’ ওয়াসিম জানান, তার নিউ জিল্যান্ডে অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য হলো সেখানে মানুষকে সম্প্রদায়গতভাবে নয়, মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।