নিউ জিল্যান্ডে সন্দেহভাজন হামলাকারী ট্যারান্টকে যেভাবে রাখা হয়েছে

আর ১০ জন সাধারণ বন্দির মতো করে নয়, নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্দেহভাজন হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টকে কারাগারে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়। তার কারারক্ষী নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সামরিক বিমানে করে কড়া নিরাপত্তাবিশিষ্ট অকল্যান্ডের পারোমোরেমো কারাগারে নেওয়া হয়েছে তাকে। ওই কারাগারে বন্দি রয়েছে দেশটির কুখ্যাত সব অপরাধী। সেখানে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রয়েছে সে।
noname

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫০ জন মুসল্লিকে হত্যা করে অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ব্রেন্টন ট্যারান্ট। উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী এ হামলাকারী এর আগে অনলাইনে ১৬ হাজার ৫০০ শব্দের একটি ইশতেহারে নৃশংস এ হামলার পেছনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে। এতে নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের নৃশংস ওই খুনি দাবি করে, শ্বেতাঙ্গরা গণহত্যার শিকার। যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার আগ্রহের কথাও জানায় সে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের নতুন প্রতীক’ আখ্যায়িত করে মুসলমানদের জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরিরও আহ্বান জানায় হামলাকারী।

এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলাকারীকে ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার জন্য নিয়োজিত রয়েছে কেবল শ্বেতাঙ্গ কারারক্ষীরা। ওই সূত্র বলেছেন, নিউ জিল্যান্ডে সাধারণত এমনটা ঘটতে দেখা যায় না। জাতিগোষ্ঠী কিংবা বর্ণ বিবেচনা করে নিউজিল্যান্ডে কারারক্ষী নিয়োগ করা হয় না।’ তার ধারণা, কর্তৃপক্ষ হয়তো ভাবছেন অশ্বেতাঙ্গ নিরাপত্তা কর্মীকে নিয়োজিত করা হলে তাদের আক্রোশের শিকার হতে পারেন ওই হামলাকারী। তবে তার প্রশ্ন: কেন এই বিশেষ নিয়ম করতে হবে।
ট্যারান্টের কারারক্ষী হিসেবে কেবল শ্বেতাঙ্গদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এক কর্মকর্তা নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছেন, আমাদের বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের অনেক কর্মী রয়েছেন। নিরাপত্তাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের স্বাভাবিক রুটিন মাফিক কর্মী বণ্টন প্রক্রিয়া তার জন্য পরিবর্তন হয়নি এবং হবেও না।’
হামলাকারী ট্যারান্টকে পারোমারেমো কারাগার নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারা জানান, অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা ট্যারান্টকে নিরাপদভাবে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছেন। পারেমোরেমো কারাগারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বন্দি রয়েছে ট্যারান্ট। ওই কারাগারে ২৬০ জন বন্দি থাকতে পারে। প্রত্যেকের ৩.১ মিটার প্রস্থ ও ২.৯ মিটার ‍উচ্চতার সেলে থাকতে হয়। সেখানে টয়লেট, শাওয়ার ও বেসিন রয়েছে। দেশের সব কুখ্যাত অপরাধীকে রাখা হয় সেখানে।

ট্যারান্টকে অন্যান্য অপরাধী থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা প্রত্যক্ষ কিংবা সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি রাখা হচ্ছে তার ওপর। এছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই তার। কাছে থাকবে না কোনও পত্রিকা। থাকবে না রেডিও কিংবা টেলিভিশন সুবিধাও। ওই সূত্র জানায়, স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই তার ওপর নজরদারি চলছে। তবে তার পোশাকের ব্যাপারেও নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। আত্মঘাতী কোনও পদক্ষেপ যেন না নিতে পারে তাই পরিধানের জন্য তাকে নীল গাউন সরবরাহ করা হয়েছে। এটা অপেক্ষাকৃত মোটা আকৃতির পোশাক।

৪০ বছর সাজা ভোগ করে সম্প্রতি সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া কুখ্যাত বন্দি আর্থার টেলর ওই কারাগার নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। ১৩ মাস সেখানে থাকা আর্থার বলেন, দিনে একবার গোসল করার সুযোগ ছিলো। দরজার এক ছিদ্র দিয়ে খাবার ভেতরে দেওয়া হতো। বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই নেই সেখানে। অন্যান্য বন্দির সঙ্গে যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানকার পরিবেশ মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন।