খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সৌদির প্রতি আহ্বান জার্মানির

ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। বুধবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার বার্গার। তিনি বলেন, সৌদি বিচার বিভাগের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা পরিপূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে আইনের শাসন নিশ্চিত করবে।

ক্রিস্টোফার বার্গার বলেন, সৌদি আরবে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাস থেকে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু তার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এর আগে এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সৌদি আরবের ৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ তহবিল ফিরিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলিউড ফার্ম এনডেভার ট্যালেন্ট এজেন্সি। রিয়াদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে। এনডেভারকে সমৃদ্ধ করা এবং এর কাজের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে বহুমুখী করার লক্ষ্য নিয়ে ওই তহবিল বিনিয়োগ করেছিল রিয়াদ।

ক্রীড়া ও চলচ্চিত্র নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে এনডেভার। গত বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বেশ কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের উন্নয়ন এবং তেলের ওপর দেশটির নির্ভরতা কমাতে চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

গত বসন্তে এনডেভার ফার্মের প্রধান এরিয়েল এমানুয়েলকে বিনিয়োগ তহবিল দিয়েছিল সৌদি আরব। এর মধ্য দিয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ডিজনির প্রধান নির্বাহী রবার্ট ইগের এবং অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস একত্রিত হয়েছিলেন। তবে গত বছরের অক্টোবরে সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকে কেন্দ্র করে রিয়াদকে এ তহবিল ফিরিয়ে দিয়েছে এনডেভার।

সংশ্লিষ্ট দুই সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে খাশোগি হত্যার প্রতিবাদে কার্যকরভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে এনডেভার। উবার গোল্ডম্যান স্যাকসসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি গত বছরের অক্টোবরে রিয়াদে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জন করার কয়েক মাসের মাথায় এনডেভারের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

৫৯ বছর বয়সী খাশোগি একসময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি থাকলেও পরবর্তীতে সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। গ্রেফতার এড়াতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাচনে চলে যান তিনি। তুর্কি বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে পূর্ববর্তী বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেট ভবনে গিয়ে হত্যার শিকার হন খাশোগি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগি কনস্যুলেট ভবনে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি আরব। জানায়, ইস্তানবুলস্থ কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন খাশোগি। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ নাকচ করে আসছে। সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড।