এসএনসি লাভালিন কেলেঙ্কারি

সাবেক দুই মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করলেন ট্রুডো

বহুল আলোচিত এসএনসি লাভালিন কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক দুই মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। মঙ্গলবার তাদের বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, ওই দুই সাবেক মন্ত্রী দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

nonameজাস্টিন ট্রুডো বলেন, তার সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবো এবং ট্রেজারি বোর্ডের সাবেক প্রধান ফিলপট দলীয় আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে দল থেকে তাদের প্রার্থিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মূলত নির্মাণ সংস্থা এসএনসি লাভালিন সংক্রান্ত নতুন নথি সামনে আসার পরই এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আর এসব নথি প্রকাশ করেছেন তার সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবোল্ড। তিনি অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতির তদন্ত থেকে সংস্থাটিকে রক্ষা করতে চাপ দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, দাবি প্রমাণের জন্য এ সংক্রান্ত একটি ফোনকলের রেকর্ডিং ও অন্যান্য নথি কানাডার হাউস অব কমন্সে সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন ট্রুডোর সাবেক আইনমন্ত্রী।

কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, লিবিয়াতে প্রকল্প পেতে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মর গাদ্দাফির ছেলে সাদি গাদ্দাফিকে তারা অনৈতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। বিদেশিদের ঘুষ দিয়ে প্রকল্প পাওয়ার এমন চেষ্টা কানাডার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রায় সাত বছর ধরে কানাডার পুলিশ এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ মাসের শুরুর দিকে কমন্সের জাস্টিস কমিটি এ সংক্রান্ত শুনানি সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। কিন্তু জোডি উইলসন-রেবোল্ড আবারও শুনানির দাবি জানি নতুন নথি উপস্থাপন করেছেন।

হাউস অব কমন্সের সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে জমা দেওয়া ফোনকলের ১৮ মিনিটের রেকর্ডিংটিতে রয়েছে ট্রুডো সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী জোডিউইলসন-রেবোল্ড এবং প্রিভি কাউন্সিলের কর্মকর্তা মাইকেল ওয়েরনিকের আলাপচারিতা। তারা এসএনসি লাভালিনকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো চান না, এসএনসি লাভালিনকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হোক। তার ইচ্ছে একটি সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির ইতি টানা হোক।

ট্রুডো এমন অভিযোগের বিষয়ে আগে বলেছিলেন, কুইবেক অঞ্চলের কর্মসংস্থানের স্বার্থে যদি তিনি কোনও ভূমিকা রেখে থাকেন তাহলে তিনি ভুল কিছু করেননি। ফলে এজন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। এসএনসি লাভালিন ওই অঞ্চলে অনেক বড় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। কুইবেকের প্রায় আট হাজার বাসিন্দা এসএনসি-লাভালিনে কাজ করেন।

ওই ফোনালাপের রেকর্ডিং জমা দেওয়ার বিষয়ে জোডি উইলসন-রেবোল্ড বলেছেন, গোপনে কথা রেকর্ড করে হয়তো তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ কাজ করেছেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কি ঘটছিল তার প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখার চিন্তা থেকে তিনি ফোনকলটি রেকর্ড করেন। কমিটির কাছে তিনি বলেছেন, এই রেকর্ডিং শুনেই কমিটির সদস্যরা বুঝতে পারবেন, এসএনসি লাভালিনকে রক্ষার বিষয়ে ওয়েরনিক তাকে কোনও চাপ দিয়েছিলেন কি না।

কমন্সের জাস্টিস কমিটি এ বিষয়ক শুনানির সমাপ্তি ঘোষণা করলেও জোডি উইলসন-রেবোল্ড জানান, তার দেওয়া সাক্ষ্যের পক্ষে তিনি নতুন নথি দাখিল করতে চান। কানাডার বিরোধী দলগুলোও তাকে সমর্থন দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কমিটিকে ফোনকলের রেকর্ডিং ও অন্যান্য নথি গ্রহণ করতে হয়েছে। ৪০ পৃষ্ঠার নথির মধ্যে রয়েছে এ বিষয়ক বিভিন্ন ইমেইল ও টেক্সট ম্যাসেজের তথ্য। বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে করে চাপ বেড়েছে ট্রুডোর ওপর। কেননা, এ বছরই কানাডায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর তাই আগেভাগেই এসএনসি লাভালিন কেলেঙ্কারির বদনাম ঘোচাতে সাবেক দুই মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করলেন ট্রুডো।