অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর বেনসুদার ভিসা বাতিল করলো যুক্তরাষ্ট্র

নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতৌ বেনসুদার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বেনসুদার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ও তাদের মিত্রদের সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্তে নিয়োজিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আইসিসি প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হুঁশিয়ার করেছিলেন, এ ধরনের তদন্তে জড়িত সকল আইসিসি কর্মীর ভিসা প্রত্যাখ্যান ও প্রত্যাহার করা হবে। বেনসুদার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোনও ধরনের ভয় ও অনুকম্পা ছাড়াই’ কাজ করে যাবেন আইসিসি’র এ প্রসিকিউটর। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেনসুদা
নাইন ইলেভেনের হামলার পর ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অভিযান শেষ হয় ২০১৪ সালে। আর রোম স্ট্যাচু এর আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কার্যক্রম শুরু করে ২০০২ সালের ১ জুলাই থেকে। যুক্তরাষ্ট্র এ আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম নীতিমালায় স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তা প্রত্যাহার করে নেন। এই আদালত সাধারণত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের অভিযুক্ত করে থাকে।

২০১৬ সালে আইসিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালিত একটি গোপন আটককেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী নির্যাতন চালিয়েছে। এ অভিযোগটি বিশ্বাস করার মতো যৌক্তিক ভিত্তি আছে বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া আফগান সরকার ও তালেবান যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আফগান সংঘাতের সময় সব পক্ষের সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্তে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে নিয়োজিত আছেন আইসিসির প্রসিকিউটর বেনসুদা। সন্দেহভাজনদের আটকের ঘটনায় মার্কিন বাহিনীর সদস্যদের সম্ভাব্য ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন তিনি। আইসিসির বিচারপতিরা এখনও বিভিন্ন উপকরণগুলো পর্যালোচনা করছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরুর ব্যাপারে তারা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত দেননি।

বৃহস্পতিবার রয়টার্সের কাছে ইমেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে বেনসুদার কার্যালয় জানায়, ‘আমরা আপনাদের নিশ্চিত করছি যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রসিকিউটরের প্রবেশের ভিসা প্রত্যাহার করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।’ তবে এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন কাজে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের কার্যালয়ে বেনসুদার প্রবেশ ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছে তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত জাতিসংঘের আদালত না হলেও হেগে জাতিসংঘের সুপারিশকৃত মামলাগুলো নিয়ে ব্রিফ করতে বেনসুদাকে নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা পরিষদে যেতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে বিশ্বের স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ আদালতের কাজের ওপর ‘অন্যায্য হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে।