শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিহতের এ সংখ্যা জানিয়েছেন। এর আগে সোমবার সকালে পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা  ২৯০ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তবে সোমবার রাতে আহতদের মধ্যে আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

ভয়াবহ ওই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫০০ জন। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন জানান, হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩০ জন বিদেশিও রয়েছেন। দেশ এবং দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও জানান রুয়ান বিজয়বর্ধন। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস দুর্ভাগ্যজনক এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সব অপরাধীকে যত দ্রুত সম্ভব হেফাজতে নেওয়া হবে। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।

রবিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলায় নিহতদের স্মরণে ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস পালন করছে শ্রীলঙ্কা। সোমবার রাতে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা মঙ্গলবার দিবসটি পালনের ঘোষণা দেন।

টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, এই অকল্পনীয় ট্রাজেডির মুখে লঙ্কান জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা আবশ্যক।

এর আগে সোমবার কলম্বোয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ২১ এপ্রিলের সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের আশঙ্কার কথা জানান শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথা সেনারত্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না যে, এই হামলাগুলো শুধু দেশের ভেতরে সীমাবদ্ধ একটি গোষ্ঠী চালিয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ছাড়া এসব হামলা সফল হতে পারতো না।’

হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন রজিথা সেনারত্ন। তিনি জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহতদের সবার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য এক লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। আহতরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন। বোমার আঘাতে জর্জরিত গির্জা মেরামতের জন্য সরকারিভাবে তহবিল দেওয়া হবে। খুব শিগগিরই এটি শুরু হবে।

রজিথা সেনারত্ন বলেন, এ ঘটনার দায় আমাদের। আমরা খুবই মর্মামত। প্রত্যেকের কাছ থেকে ক্ষমা লাভে আমরা আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছুই করছি।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি’র হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, গির্জায় হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল 'একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা'। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুনদারা দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা সতর্কতা পাঠান। এতে বলা হয়, 'একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) প্রখ্যাত চার্চ এবং কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশন লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।' এই সতর্কতা নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথা সেনারত্ন।

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছিল। এতে হামলাকারীদের নামও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ওই সতর্কতা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পর্যন্ত পৌঁছায়নি।