‘দিদি মোটেও হাসিনার দেখাদেখি মোদিকে মিষ্টি পাঠান না’

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায় (ফাইল ছবি)বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরে অন্তত তিন-চারবার সরাসরি ঢাকা থেকে নানা ধরনের বাঙালি মিষ্টি নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠিয়ে থাকেন, এ খবর কানে আসার পরই নাকি মমতা ব্যানার্জিও কলকাতা থেকে মোদির কাছে মিষ্টি পাঠানো চালু করেছেন। আর তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে কুর্তা পাঠানো তো আছেই!

দিনকয়েক আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ‘গোপন খবর’ ফাঁস করার পর, তা নিয়ে রাজনৈতিক তর্ক চরমে পৌঁছেছে।

লোকসভা নির্বাচনে একের পর এক জনসভায় মমতা ব্যানার্জি ও নরেন্দ্র মোদি যখন পরস্পরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন, তখন তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের এই সমীকরণ তৃণমূলকে বেশ অস্বস্তিতেই ফেলেছে।

বিরোধী কংগ্রেস ও বামপন্থীরা বলার সুযোগ পেয়ে গেছেন, ‘দিদিভাই’ ও ‘মোদিভাই’ বাইরে যতই ‘কুস্তি’ করুন— ভেতরে ভেতরে যে আসলে ‘দোস্তি’তেই ভরসা রাখেন, সেটাও এতে প্রমাণ হয়ে গেলো।

কিন্তু, তৃণমূল নেতৃত্ব বেজায় চটেছে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ এখানে টেনে আনায়।

তৃণমূলের এক সিনিয়র রাজ্যসভা এমপি সোমবার (২৯ এপ্রিল) দিল্লিতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মমতা দি যে প্রধানমন্ত্রীকে মিষ্টি বা কুর্তা পাঠান এতে কোনও ভুল নেই। এটা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সৌজন্য ও উদারতার পরিচয়। কিন্তু, এটা তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখাদেখি চালু করেছেন, এ খবর একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা।’

‘আসলে মুখ্যমন্ত্রী তো ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদিকে উপহার পাঠান না– তিনি পাঠান দেশের প্রধানমন্ত্রীকে, তার সাংবিধানিক পদ ও মর্যাদাকে সম্মান দিয়ে। আর এই রেওয়াজ বহুদিন ধরেই তিনি চালু রেখেছেন– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানিয়েই বলছি, তার কাছ থেকে এগুলো মমতা ব্যানার্জির শেখার কোনও প্রয়োজন নেই।’

‘কাজেই শেখ হাসিনার দেখাদেখি মমতা ব্যানার্জিও মিষ্টি পাঠানো চালু করেছেন– নরেন্দ্র মোদির এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা। এটা মোদি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে মন্তব্য করলেই ভালো করতেন’, বলেছেন মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ ওই এমপি।

আসলে মমতা ব্যানার্জির উপহার পাঠানোর কথা ফাঁস করে দিয়ে নরেন্দ্র মোদি ভোটের মৌসুমে যে চাল চেলেছেন– তৃণমূলও তার জবাব দিতে চাইছে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে। মমতার ভাইপো ও এমপি অভিষেক ব্যানার্জি থেকে শুরু করে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা এমপি ডেরেক ও ব্রায়েন– সবাই এই ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, কিন্তু মমতা যে নরেন্দ্র মোদিকে উপহার পাঠান, সে কথাটা তারা কেউই অস্বীকার করেননি।

কংগ্রেস নেতা রাজ বাব্বর আবার এরইমধ্যে কলকাতায় গিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে খোঁচা দিয়ে বলে এসেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির কুর্তার আসল সাইজ কত, সেটা তাহলে দেখছি দিদিই ভালো জানেন।’

নরেন্দ্র মোদি নিজের ‘ছাপান্ন ইঞ্চি’ ছাতির গর্ব করে অনেক জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন, বলেছেন তিনিই কেবল পারেন পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দিতে। কিন্তু, তার ছাতির আসল সাইজ কত, তা নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করার কোনও সুযোগই ছাড়েননি– আর এই কুর্তা-বিতর্কের পর তা আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে।

আর এই স্পর্শকাতর বিষয়টি আলাদা মাত্রা পেয়ে গেছে নরেন্দ্র মোদি নিজেই শেখ হাসিনার নামও টেনে আনায়।

দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অধ্যাপক ও পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ভরদ্বাজের কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক যে খুবই মধুর, সেটা সবারই জানা।’

‘আর দুই সরকার প্রধানের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কটা ভালো হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, বিগত কয়েক বছরে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কেও আমরা তার প্রতিফলন দেখেছি বার বার।’

‘কিন্তু, শেখ হাসিনার উপহার পাঠানোর উল্লেখের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির নামটাও টেনে এনে নরেন্দ্র মোদি সম্ভবত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দেখাদেখি দেশের ভেতরেও তার কোনও কোনও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী গোপনে তার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক চাইছেন।’

আর সেটা এখন ফাঁস হয়ে যাওয়াতেই তৃণমূল নেতৃত্ব এখন বিরক্ত। যার জেরে তাদের বলতে হচ্ছে ভদ্রতা-সৌজন্য-প্রীতি উপহারের পাঠ মমতা ব্যানার্জিকে আর যাই হোক, বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে হবে না!