পরমাণু সমঝোতা থেকে আংশিক সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা ইরানের

পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে আংশিকভাবে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঐতিহাসিক এ সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের এক বছরের মাথায় এ সিদ্ধান্ত নিলো তেহরান। বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে নিজ দেশের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। তেহরানে নিযুক্ত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের রাষ্ট্রদূতদের রুহানির স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ’র কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত রাখবে তেহরান। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং ভারি পানি মজুদ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ইরান আর মানবে না।

জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য এবং জার্মানিকে নিয়ে গঠিত ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ২০১৫ সালে সমঝোতায় উপনীত হয়েছিল তেহরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এটি পরিত্যাগ করায় তেহরান কিছু প্রতিশ্রুতি পালন থেকে বিরত থাকবে।

এর আগে, পাঁচ দেশের রাষ্ট্রদূতদের তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানান হয়। তাদের হাতে এ চিঠি তুলে দেন ইরানের উপ পরররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বা এনএনএনসি’র বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা বিশদভাবে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত মে মাসে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা একতরফাভাবে বের হয়ে যাওয়ার পর ইরান সর্বোচ্চ আত্মসংযম এবং ধৈর্য দেখিয়েছে। এছাড়া সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশকে ইরানের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের অনুরোধে পর্যাপ্ত সময়ও দেওয়া হয়েছে।

ইরানের ব্যাপক ধৈর্য ধারণ সত্ত্বেও তেহরানের ওপর পুনরায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে অন্য পক্ষগুলো। এ অবস্থায় পরমাণু সমঝোতার প্রতি প্রতিশ্রুতি হ্রাস করা ছাড়া আর কোনও পথ ইরানের জন্য ছিল না। বর্তমান অবস্থায়, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং ভারি পানি মজুদ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ইরান আর মানবে না।

চিঠিতে ইরানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশেষ করে তেল এবং ব্যাংকিং খাতের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষর করা দেশগুলোকে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরানের দাবি যতটা মেনে নেওয়া তেহরানও সে অনুযায়ী তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে।

ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হলে বা ইরানের পরমাণু তৎপরতার বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নেওয়াসহ যে কোনও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ নেওয়া হলে তেহরান তার দৃঢ় এবং দ্রুত জবাব দেবে।

চিঠিতে বলা হয়, পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় ইরান দীর্ঘ সময় ধরে নমনীয়তা দেখিয়েছে। এবার সমঝোতা রক্ষায় অন্যপক্ষকে তাদের সদিচ্ছার প্রমাণ দেখাতে হবে। তাদের আন্তরিক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। সূত্র: পার্স টুডে।