ইইউ ও রাশিয়ার উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দেওয়া: ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটে আবারও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে ফিলিস্তিন। মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, মার্কিন শান্তি পরিকল্পনায় দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা না থাকলে রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দেওয়া। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।

12রিয়াদ মানসুর বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে তাদের সমর্থন সাধুবাদের দাবিদার। কিন্তু এই সমর্থনই যথেষ্ট নয়। এটি বাস্তবায়নে তাদের উদ্যোগী হওয়া উচিত।

এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরায়েল ঘেঁষা শান্তি পরিকল্পনা মঙ্গলবার ইসরায়েলের একটি সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমে ওই পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল, পিএলও এবং হামাসের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফিলিস্তিন নামে কোনও দেশ থাকবে না। চুক্তি অনুযায়ী, নতুন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের নাম হবে নিউ প্যালেস্টাইন। গাজা উপত্যকা, যিহূদিয়া পার্বত্য এলাকা এবং পশ্চিম তীরের সামারিয়া এলাকা নিয়ে গঠিত হবে নিউ প্যালেস্টাইন। তবে পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর তার কোনও সার্বভৌমত্ব থাকবে না। এসব বসতির সার্বভৌমত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে।

জেরুজালেম নগরী নিয়ে কোনও ভাগাভাগি হবে না। বরং এটি হবে নিউ প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েল উভয় দেশের রাজধানী। নগরীর আরব বাসিন্দারা নিউ প্যালেস্টাইনের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। আর ইহুদিরা ইসরায়েলি নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করবেন। ইহুদিরা আরবদের ঘরবাড়ি কিনতে পারবে না। আরবরাও ইহুদিদের বাড়িঘর কিনতে পারবে না। জেরুজালেমে নতুন আর কোনও এলাকা দখল করা হবে না। পবিত্র স্থানগুলোর বিদ্যমান অবস্থা বজায় থাকবে।

উভয় দেশের অখণ্ড রাজধানী জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের জেরুজালেম পৌরসভার হাতে। তবে সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। ইসরায়েলের জেরুজালেম পৌরসভার কাছে ট্যাক্স ও পানির বিল সরবরাহ করবে নিউ প্যালেস্টাইন।

ফিলিস্তিনে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য মিসর নতুন জমি দেবে। কলকারখানা নির্মাণ, বাণিজ্যিক ও কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্যও নতুন ভূখণ্ড দেবে মিসর। তবে ফিলিস্তিনিরা এখানে বসবাসের সুযোগ পাবে না। লিজ বাবদ মিসরকে মূল্য পরিশোধ করবে নিউ ফিলিস্তিন। লিজ বাবদ ঠিক কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হবে তা নির্ধারণ করে দেবে মধ্যস্থতাকারী ও সহযোগী দেশগুলো।

চুক্তি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো। নিউ প্যালেস্টাইনের বিভিন্ন প্রকল্পে পাঁচ বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে তারা। এর আওতায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে থাকা ইহুদি বসতিগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। আন্তর্জাতিক সহযোগীরা যে অর্থ সহায়তা দেবে তার ২০ শতাংশ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেবে ১০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ তহবিলের যোগান দেবে। তেল বিক্রির অর্থ থেকে তারা এ সহায়তা দেবে। চুক্তি বাস্তবায়নের আর্থিক বোঝা তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোকেই বইতে হবে। কেননা, এ চুক্তিতে তারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

নিউ প্যালেস্টাইনকে কোনও সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। একমাত্র পুলিশকে হালকা অস্ত্র বহনের সুযোগ দেওয়া হবে। নিউ প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সুরক্ষা চুক্তি সম্পাদিত হবে। এর আওতায় বিদেশি আগ্রাসন থেকে দেশ রক্ষায় ইসরায়েলকে অর্থ দেবে ফিলিস্তিন। মধ্যস্থতাকারী সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে এ অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। চুক্তি স্বাক্ষরকালে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস তার সব অস্ত্র মিসরের কাছে জমা দেবে। ব্যক্তিগত অস্ত্রও এর আওতায় পড়বে। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, মিডল ইস্ট মনিটর।