অস্ত্রোপচারে নিবিষ্ট এক প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বের বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেশ পরিচালনার কাজটিই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়। এর বাইরে তাদেরকে অন্য কোনও কাজ করতে হয় না বললেই চলে। তবে বহু কাজে পারদর্শী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। পেশায় চিকিৎসক শেরিং সপ্তাহের ছুটির দিনটি কাটিয়ে দেন অপারেশন টেবিলে। ব্যস্ত থাকেন রোগীদের সেবায়।

ন্যাশনাল রেফারাল হাসপাতালে এক রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী
গত বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার আগে পর্যন্ত ভুটানের শীর্ষ সারির চিকিৎসকদের একজন ছিলেন লোটে শেরিং। এখন সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। আর সপ্তাহান্তে পূর্ববর্তী দায়িত্ব পালন করতে তিনি চলে যান হাসপাতালে। রোগীদের সেবা দিয়ে যেন গোটা সপ্তাহের ক্লান্তি বিলীন হয়ে যায় তার।

এক শনিবারের সকালে জিগমে দোরজি ওয়াংচুক হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে সাক্ষাৎকার দেন শেরিং। জানান, সপ্তাহের ছুটির দিনে চিকিৎসা দেওয়ার এ কাজটি তাকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত করে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু মানুষ গলফ খেলে, কেউ কেউ আর্চারি খেলে, আর আমি অস্ত্রোপচার করতে পছন্দ করি।’

আমরণ এ কাজটি করে যেতে চান বলে জানিয়েছেন শেরিং। তিনি বলেন, “আমি মৃত্যু পর্যন্ত এ কাজটি চালিয়ে যাব। প্রতিদিন এখানে আসতে না পারার শূন্যতা বোধ করি আমি। সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে আমি যখন গাড়িতে করে অফিসের দিকে যাই, তখন মনে হয় ইশ যদি বামদিকে ঘুরে হাসপাতালে যেতে পারতাম।”

স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক সংস্কারকে রাজনৈতিক আলোচ্যসূচির কেন্দ্রে রেখেছেন শেরিং। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী ও সার্জনের দায়িত্বের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আমি রোগীদের পরীক্ষা করি ও চিকিৎসা দিই। আর সরকারের ক্ষেত্রে আমি নীতিমালার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি এবং সেগুলো আরও ভালো করার চেষ্টা করি।’ বৃহস্পতিবার সকালে ট্রেনি চিকিৎসকদেরও পরামর্শ দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

শেরিং এর কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে পারলে নিজেদেরকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন ভুটানের জনগণ। জিগমে দোরজি ওয়াংচুক হাসপাতালে পাঁচ ঘণ্টা ধরে শেরিং অস্ত্রোপচার করেছেন এমন এক রোগী জানান, এমন একজন উঁচু মানের চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে পেরে তিনি অভিভূত। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার অস্ত্রোপচার করেছেন। তিনি এদেশের সেরা চিকিৎসকদের একজন। আমার অনেক বেশি স্বস্তি হচ্ছে।’

২০১৩ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ব্যর্থ হন লোটে শেরিং। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। রাজতন্ত্রের অবসানের পর শেরিং দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। এক দশক আগে গণতন্ত্রে পদার্পণ করে। ধারাবাহিকভাবে এশিয়ার সুখীতম দেশের তালিকায় রয়েছে ভুটান।