ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে ইউরোপকে জানালো যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে ইউরোপীয় নেতাদের অবহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মন্ত্রীদের কাছে এ বিষয়ে নানা তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

সোমবার ব্রাসেলসে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র ও ন্যাটো কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠকে মিলিত হন পম্পেও। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ইরান বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি ব্রায়ান হুক। তিনি বলেন, ইরান তার হুমকির মাত্রা বৃদ্ধি করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার ইরানের মিত্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়া সফর করবেন বলেও জানান ব্রায়ান হুক। সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হবেন তিনি।

সোমবারই রাশিয়া সফরের কথা ছিল পম্পেও-র। তবে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে এদিন ব্রাসলসে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি।

ব্রায়ান হুক বলেন, আমরা প্রকাশ্যে যা বলছি তার নেপথ্যে আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলতে চান। আমাদের বিশ্বাস, ইরানের উচিত হুমকি ধামকি না দিয়ে আলোচনায় বসার চেষ্টা করা।

এর আগে সোমবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরানের পরমাণু চুক্তির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে মোঘেরিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফেডেরিকা মোঘেরিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান বলেন, আমরা এ চুক্তির প্রতি সর্বোতভাবে আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এ চুক্তির প্রতি আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে যেন উত্তেজনা আরও বেড়ে না যায়।

২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে ৬ জাতিগোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্র (পি-ফাইভ) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি (ওয়ান) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো এ সমঝোতা বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালনে ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে এ মাসের গোড়ার দিকে চুক্তি থেকে আংশিকভাবে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তেহরান। চুক্তির আওতাভুক্ত দেশগুলোকে (ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া) আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে তেহরান। ইরানের দাবি, তারা চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসার ঘোষণা দিচ্ছে না। বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সমঝোতা বাস্তবায়নের দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দিতে আগ্রহী তারা। তা না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ইরান।

তেহরানের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সর্বপ্রথম প্রতিক্রিয়াটি এসেছে ফ্রান্সের তরফ থেকে। দেশটি সতর্ক করে বলেছে, চুক্তি থেকে সরে এলে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া ইউরোপের হাতে অন্য কোনও উপায় থাকবে না।