যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে বেইজিংয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সাথে বৈঠক করেছেন চীন সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই শুক্রবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জাফরি

ইরানের প্রধান রফতানি তেলের অন্যতম ক্রেতা দেশ চীন। মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার পর তেহরানের জন্য বিশ্ববাজার উন্মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার বর্ষপূর্তির দিনে চুক্তি থেকে আংশিক সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় তেহরান। এরপরই ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে উগসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধসরঞ্জাম মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরুর অভিযোগ এনেছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হতে থাকায় নিজেদের জন্য বিশ্ববাজার উন্মুক্ত রাখার প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তেহরান। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জাপান ও চীন সফর করছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জাফরি। শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন দিয়াওটাইতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং লি-এর সঙ্গে বৈঠক করেন জাফরি।

বৃহস্পতিবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কানো'র সঙ্গে বৈঠকে জাফরি বলেন, ‘২০১৫ সালে পাশ্চাত্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে একতরফাভাবে আমেরিকা বের হয়ে যাওয়ার পর তেহরান সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ও সংযম দেখিয়েছে। ইরান এখনও পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত রিপোর্টই তার প্রামাণ্য দলিল।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে ৬ জাতিগোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভিয়েনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্র (পি-ফাইভ) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি (ওয়ান) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো এ সমঝোতা বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান।