ভোটের শেষ দিনে ভারতীয়দের নজর বুথফেরত জরিপে

সপ্তম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে রবিবার (১৯ মে) শেষ হলো ভারতের লোকসভা নির্বাচন। গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হবে ২৩ মে। তবে তার আগেই কে বা কারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তার আভাস পাওয়া যাবে বুথ ফেরত জরিপগুলো থেকে। আচরণবিধি অনুযায়ী শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আধঘণ্টা সময় পার হওয়ার আগে বুথফেরত জরিপ প্রকাশের সুযোগ নেই।

ভারতের স্থানীয় সময়Untitled-1 copy
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর থেকে উঠে যাচ্ছে সে নিষেধাজ্ঞা। এরপরই ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসহ জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলো বুথফেরত জরিপের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য ফলাফলের একটা রূপরেখা হাজির করবে। চূড়ান্ত ফল জানার আগে পর্যন্ত সে জরিপের দিকেই তাকিয়ে আছে ভারতবাসী।

বুথফেরত জরিপ কী এবং কিভাবে তা পরিচালিত হয়?

ভোটাররা কোন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তা জানতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে যে জরিপ পরিচালিত হয় তাকে বুথফেরত জরিপ বলা হয়।  ভোটাররা বুথ থেকে বের হয়ে আসার পর এই ধরনের জরিপ পরিচালিত হয় বলে এটি বুথফেরত জরিপ নামে পরিচিত।  এই ধারার জরিপের মধ্য দিয়ে  কোন দল সরকার গঠন করবে তার ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। জনমত জরিপের সঙ্গে এই ধারার জরিপের খানিক পার্থক্য আছে। জনমত জরিপে জানতে চাওয়া হয় ভোটার কাকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ভারতে কয়েকটি সংস্থা বুথফেরত জরিপ পরিচালনা করে থাকে।

বুথফেরত জরিপে কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন?

নির্বাচনে সব ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে জনমত জরিপ ও বুথফেরত জরিপের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০০৪ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব তোলে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় পর্যায়ের ৬টি দলের পাশাপাশি ১৮টি রাজ্যভিত্তিক দল কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে। আংশিকভাবে ওই প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ১২৬ (এ) ধারা সংযোজনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বুথফেরত জরিপের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। সংযুক্ত ধারা অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপের নির্বাচন শুরুর সময় থেকে সব রাজ্য ও কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আধঘণ্টা পর পর্যন্ত এই ফলাফল প্রকাশের কোনও সুযোগ নেই।  কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভারতের নির্বাচন কমিশন ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৬ ধারার ১ নং উপধারা বলে ১১ এপ্রিল, ২০১৯ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ১৯ মে, ২০১৯ রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক কোনও ধরনের মাধ্যমে বা অন্য কোনও ভাবে একজিট পোলের প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে।

মূলত নির্বাচনি ফলাফলের ওপর প্রভাব এড়াতেই সব ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব ছিল নির্বাচন কমিশনের। সমালোচকদের মতে, এ ধরনের জরিপ প্রশ্নের ধরন, ভাষা এবং সময় দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে, জনমত ও বুথফেরত জরিপগুলো উদ্দেশ্যমূলক এবং তাদের প্রতিপক্ষের অর্থায়নে পরিচালিত। ফলে ভোটারদের স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটার বদলে তাদের পছন্দের উপর এ ধরনের জরিপের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।

ফলাফল সম্পর্কিত পূর্বানুমান প্রচার/প্রকাশের নিয়ম সম্পর্কে কী বলছে ভারতের নির্বাচন কমিশন?

নিষিদ্ধ সময়কালের মধ্যে ভোটের ফল সম্পর্কিত কোনও বুথফেরত জরিপ অনুষ্ঠান বা নিবন্ধ সম্প্রচার বা প্রকাশ করতে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে নিষেধ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে ভোটের ফল নিয়ে কোনও ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে না। জ্যোতিষ হোক কিংবা ট্যারট কার্ড রিডার অথবা রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা অন্য কেউই এ ধরনের পূর্বানুমান করতে পারবেন না। এ ধরনের কাজ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৬ (এ) ধারানুসারে নিষিদ্ধ। এর আগের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল ১৯ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনমত জরিপ নিষিদ্ধ।

জনমত জরিপ কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে জনমত জরিপ অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনের ফল সম্পর্কে ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর উদাহরণ রয়েছে। ২০০৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ কোয়ালিশন জিতবে বলে সম্পূর্ণ ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, আবার ২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র আসন নিয়েও ভুল করা হয়েছিল বুথফেরত জরিপে।