খাশোগি হত্যার পরও সৌদি আরবকে পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পরও সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ধারাবাহিক অনুরোধের পর যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার কংগ্রেসকে জানিয়েছে, রিয়াদের কাছে ৭ বার এই প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দুইটি অনুমোদন খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পরের। সমালোচকরা মনে করেন, এইসব প্রযুক্তির বিক্রয় অনুমোদন দেওয়ার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

noname

দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচক খাশোগি।। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সৌদি আরব দাবি করে, ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন তিনি। খাশোগি হত্যার পর সৌদি রাজদরবারের আদেশ অনুযায়ী ৪০ বছর বয়সী কাহতানিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ১৬ দিনের মাথায় গত বছর (২০১৮ সাল) ১৮ অক্টোবরে একবার সৌদি আরবের কাছে পরমাণু প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অপর বিক্রয় অনুমোদনটি দেওয়া হয়েছে এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর টিম কেইন বলেছেন, ‘আমার খুবই গুরুতর একটি জিজ্ঞাসা আছে যে, পরমাণু প্রযুক্তি বিক্রয়ের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার কতোটুকু ট্রাম্প পরিবারের অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে আর কতোটা মার্কিন জনতার স্বার্থে নেওয়া হয়েছে’।

চলতি বছরের শুরুতে ওয়াশিংটন পোস্টের এক অনুসন্ধানে জানানো হয়, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশেই রয়েছেন খাশোগি হত্যার পরিকল্পনার অন্যতম বাস্তবায়নকারী সৌদ আল কাহতানি।‍ বাকি বিশ্বের পাশাপাশি মার্কিন গোয়েন্দারাও এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ সালমান বিন মোহাম্মদের সম্পৃক্ততার আলামত পেয়েছে। তবে ট্রাম্প এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা অনুসন্ধানকে উপেক্ষা করে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

মৃত্যুর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন খাশোগি। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ ঘটনায় সৌদিবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়ার কংগ্রেসীয় দাবি উপেক্ষা করে আসছে। সৌদি আরবের প্রতি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সিনেটর কেইন এক লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন, কংগ্রেসে খোদ নিজ দলীয় আইনপ্রণেতাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরবকে তাই দিয়ে দেয়, যা তারা চায়। এই ধারার পদক্ষেপের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক অস্থিরতার সূচনা হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি।

সৌদি আরবের কাছে যে ২টি পরমাণু প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদনের খবর জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী তা এমন ধরনের ৮১০টি বিক্রয় অনুমোদনের একটি। সেই অনুমোদনগুলোর মধ্যে কোনও সরঞ্জাম রফতানির সুযোগ নেই, কেবল ওইসব প্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্যবহারিক জ্ঞান রফতানির সুযোগ রয়েছে। তবে ট্রাম্পের সমালোচকরা মনে করে, ওইসব অনুমোদনের আড়ালে ট্রাম্প প্রশাসন পরমাণু বিক্রির ক্ষেত্রে জারি থাকা সাধারণ বিধি উপেক্ষা করছে। সেই মার্কিন বিধি অনুযায়ী, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকলে সেখানে পরমাণু প্রযুক্তি বিক্রির সুযোগ নেই।