মারা গেলো ট্রাম্প-ম্যাক্রোঁর সেই বন্ধুত্বের গাছ

২০১৮ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে একটি উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেই উপহারটি ছিল একটি গাছের চারা। তারপর সেটি লাগানো হয়েছিল হোয়াইট হাউজের লনে। দুই নেতা খুব ঘটা করে গাছটি লাগিয়েছিলেন। তাদের স্ত্রীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু লাগানোর কিছুদিনের মধ্যেই গাছের চারাটি সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। সোমবার এএফপি-সহ বিভিন্ন ফরাসি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, লাগানোর কিছু দিনের মধ্যেই গাছটি মারা গেছে। 

nonameএমন সময়ে এ খবর এলো যখন জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইরানের পারমাণবিক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ বা টানাপড়েন চলছে।

এই গাছটি জন্মেছিল উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের এমন একটি জায়গায়, যেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটি লড়াই হয়েছিল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক সেটি মনে করিয়ে দিতেই তিনি এই গাছের চারাটিকে উপহার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

এ গাছটি নিয়ে তখন টুইটারে পোস্টও দিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। তিনি লিখেছেন, ‘১০০ বছর আগে মার্কিন সেনারা ফ্রান্সের বিলুতে যুদ্ধ করেছিল আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়া আমার এই ওক গাছটি হোয়াইট হাউসে আমাদের সম্পর্কের একটি স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

যে জায়গাটিতে গাছের চারাটি লাগানো হয়েছিল,  ২০১৮ সালের এপ্রিলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একজন ফটোগ্রাফার সেখানকার একটি ছবি তুলেছেন। দেখা যাচ্ছে গাছটি সেখান থেকে উধাও। সেখানে শুধু এক চিলতে হলুদ ঘাস দেখা যাচ্ছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত টুইট করে জানান, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে চারাটি আলাদা করে রাখা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর আসে, চারাগাছটি আসলে লাগানোর কিছুদিনের মধ্যেই মারা গেছে। এটি ছিল মূলত একটি ইউরোপীয় সেসিল ওক। ব্যাটল অফ বিলু উডে এর জন্ম। সেখানে ১৯১৮ সালে বড় রকমের একটি যুদ্ধ হয়েছিল। প্যারিসের উত্তর-পূর্বে এই বিলুর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা।

সেখান থেকে গাছটি নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকায়। লাগানো হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের আবাসিক দফতর হোয়াইট হাউসের সবুজ বাগানে। লাগিয়েছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। কিন্তু লাগানোর চারদিন পর গাছটি সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমেরিকার বাইরে থেকে যখন কোনও গাছপালা কিংবা প্রাণী নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেটিকে আলাদা করে রাখা বাধ্যতামূলক। আর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত রক্ষা ওয়েবসাইট বলছে, বিদেশি কোনও গাছ নিয়ে আসতে হলে সেটি আগেই পরীক্ষা করে দেখতে হয়। তবে গাছের চারাটিকে ঘিরে এই যে রহস্য সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কিন্তু চারাটি উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকে অনলাইনে তা নিয়ে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।

বাগান করা সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটকে উদ্ধৃত করে ফরাসি একটি রেডিও নেটওয়ার্ক বলছে, ওক গাছ লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময় শরৎকাল। এর ফলে গাছটির শিকড় মাটির খুব গভীরে যেতে পারে। ফলে পরের গ্রীষ্মে যে পানির অভাব হয় সেটি সে মোকাবিলা করতে পারে। সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি।