রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করতে চায় মিয়ানমারের তদন্ত কমিশন

রাখাইনে সংঘটিত রোহিঙ্গা নিপীড়ন তদন্তের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের একটি তদন্ত দল। সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম সিএনএ জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি'র উদ্যোগে গঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি-আইসিওই নামের ওই কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে শিবির পরিদর্শনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনও এতে সাড়া দেয়নি।

মিয়ানমারে সেনা নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা২০১৭ সালের আগস্টে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। রাখাইনে সেনা অভিযানে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গত বছর জুলাইয়ে জাতীয় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে মিয়ানমার। এর আওতায় গঠন করা হয় স্বাধীন অনুসন্ধান কমিশন- আইসিওই। ফিলিপাইনের কূটনীতিক রোসারিও মানালাওকে প্রধান করে গঠিত এই কমিশনের কাজ শেষ করতে এক বছর সময় দেওয়া হয়।

আইসিওই-এর মুখপাত্র বলেছেন, ‘অনুসন্ধানের মাধ্যমে যেকোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে ব্যাপক তদন্ত কাজ চালানো দরকার। তবে কক্সবাজার পরিদর্শন করতে আইসিওই-এর অনুরোধে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। এতে যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কক্সবাজারে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ও আইসিওই-এর তদন্তকারীদের বঞ্চিত করেছে। সব মিলে বাংলাদেশের ভূমিকা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মিয়ানমারের জাতীয় তদন্ত প্রক্রিয়ার জন্য হতাশাব্যঞ্জক বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে গত ৭ জানুয়ারি ড. একে আবদুল মোমেনকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইসিওই বলছে, ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে মোমেনকে চিঠি দেন রোসারিও মানালাও। সর্বশেষ গত ২৮ মে আইসিওই-এর চেয়ারপারসন মানালাও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিত প্রয়োজনের কথা জানিয়ে আবারও চিঠি দেন। মিয়ানমারের কমিশন বলছে, তাদের লক্ষ্য হলো কক্সবাজারে বসবাসরত প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য রেকর্ড, প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে ২০১৭ সালের নভেম্বরে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ থেকে ফেরত যায়নি। বাংলাদেশের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও একই ধরনের মত দিয়েছে।