রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনা নিপীড়ন এখনও চলছে: মাইক পম্পেও

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা এখনও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে তিনি একথা জানান। মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনপ্রাপ্ত ২০১৮ সালের এই প্রতিবেদনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত স্যাম ব্রাউনব্যাক সাংবাদিকদের জানান, তিনি বারবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আর ট্রাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গা শিবিরের মানুষদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। মিয়ানমারের এই সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ আখ্যা দেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।

শুক্রবার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানেরা এখনও সেনাবাহিনীর হাতে সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। এর কারণে লাখ লাখ মানুষ পালাতে অথবা জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে’।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত স্যাম ব্রাউনব্যাক জানান, শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও অনেক অনেক কিছু করতে হবে আর রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আরও চাপ প্রয়োগের দরকার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতি হলো তাদেরকে নিরাপদে ফেরার অনুমোদন দিতে হবে আর মিয়ানমারে সুরক্ষিতভাবে বসবাস করতে দিতে হবে। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি এবং অবস্থান। আমি মনে করি এগুলো এগিয়ে নিতে আমাদের আগ্রাসী হওয়া অব্যাহত রাখতে হবে’।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই ধর্মীয় কূটনীতিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে জাতিসংঘ যা করছে তাতে আমরা সমর্থন করছি, তবে আমি মনে করি বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টি খেয়াল রাখা’।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা প্রায় ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত রয়েছে। এসব নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলার দুটি আনুষ্ঠানিক শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর ধারনা মিয়ানমার থেকে আসা আরও নয় থেকে দশ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার জেলায় রয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্ব পর্যন্ত এসব রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে।