ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ব্যবহার কমছে ফেসবুকের

দুনিয়াজুড়ে কমতে শুরু করেছে ফেসবুকের ব্যবহার। ২০১৮ সাল থেকেই এমন প্রবণতা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ভুয়া খবর প্রচার রোধে ব্যর্থতা, ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাতের আশঙ্কায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটির ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তাদের লাইক–শেয়ার কমে গেছে ২০ শতাংশ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। তবে ফেসবুকের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে বরং তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও বেড়েছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ই–মার্কেটার বলছে, মার্কিন ব্যবহারকারীরা এখন ফেসবুকে গড়ে ৩৮ মিনিট সময় দিচ্ছেন, ২০১৭ সালে যা ছিল ৪১ মিনিট। ব্যবসা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মিক্সপ্যানেল বলছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে বহুল আলোচিত কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফেসবুকের লাইক, শেয়ার ও পোস্টের পরিমাণ কমে গেছে ২০ শতাংশ। 

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে করা সব জরিপ মিথ্যা প্রমাণ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তার এমন জয়ে ভূমিকা রাখে ‘দিসইজমাইডিজিটাললাইফ’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাপ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক আলেক্সান্ডার কোগান এটি তৈরি করেছিলেন। নির্বাচন নিয়ে গবেষণা করা ব্রিটিশ সংস্থা ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র হয়ে অ্যাপটি ডেভেলপ করেছিলেন কোগান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা প্রচারণায় সহায়তা পেতে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

অ্যাপটি ২০১৫ সালে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ওপর একটি জরিপ চালায়। ফেসবুকের এই অ্যাপ ছিল মূলত একটি কুইজ। এর মাধ্যমে পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য পায় গবেষণা সংস্থাটি। পরে এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়। যে ভোটারের ব্যক্তিত্ব যেমন তাকে লক্ষ্য করে ঠিক তেমন বার্তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। অ্যাপের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শিবির এত বেশি সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতে পেয়েছিল, যা ইতোপূর্বে কেউ পায়নি। অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাজানো কৌশলের কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিষয়টি সামনে আসায় ফেসবুকের শেয়ারমূল্যের ব্যাপক দরপতন ঘটে। প্রভাব পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ব্যবহারকারীদের ওপরও। ২০১৮ সালের এপ্রিলের পর থেকে কয়েক মাসের মধ্যে ফেসবুকের ব্যবহার ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বাড়লেও ফের কমতে শুরু করে ফেসবুকের ব্যবহার। এরমধ্যেই মিয়ানমারে ফেসবুক ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের জাতিগত নিধনযজ্ঞে উসকানি দেওয়ার ঘটনায় নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠে, ফেসবুক ব্যবহার করে বার্মায় রোহিঙ্গাবিরোধী গণহত্যা উসকে দিলেও এর বিরুদ্ধে যথাযথ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটি। এছাড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোর প্রতি তরুণদের আকৃষ্ট হওয়ার ঘটনাও ফেসবুকের জন্য দুঃসংবাদ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।