মার্কিন জোটে কোনও সেনা পাঠানো হবে না: জাপান

মধ্যপ্রাচ্যের পানিসীমার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সামরিক জোটে কোনও না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে জাপান। মঙ্গলবার দেশটির মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদি এ ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
nonameজাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাকেশি আয়া গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে সেনা পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা টোকিও-র নেই। মঙ্গলবার তার সে বক্তব্যেরই যেন প্রতিধ্বনি করলেন দেশটির মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাকেশি আয়া যা বলেছেন তাতে কোনও পরিবর্তন আসেনি।

মধ্যপ্রাচ্যে পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে প্রস্তাবিত সামরিক জোটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপেদষ্টা জন বোল্টনের চলমান টোকিও সফরে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

সোমবার বোল্টন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কানো, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আয়া এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শোতারু ইয়াচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, জাপানি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে শিনজো অ্যাবের জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। সেখানে তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টসহ বহু নেতার সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা উত্তেজনা প্রশমনে সব ধরনের চেষ্টা চালাবো। আর যুক্তরাষ্ট্র নতুন জোট গঠন করে কী করতে চায় সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া প্রয়োজন।noname

এর আগে এ মাসের গোড়ার দিকে পারস্য উপসাগরে ইরান ও ইয়েমেন সংলগ্ন পানিসীমার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সামরিক জোট গড়ে তোলার পরিকল্পনা কথা জানান মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মেরিন জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড। তার ভাষায়, ওই অঞ্চলে নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

মে মাসে ওমান উপসাগরে চারটি ট্যাংকারে হামলার পর গত মাসে ওই এলাকায় আরও দুটি ট্যাংকারে হামলা হয়। মে ও জুন মাসে তেল ট্যাংকারের ওপর হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তেহরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জুন মাসে ট্যাংকারে হামলার কয়েক দিনের মাথায় একটি চালকবিহীন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরানি বাহিনী। ইরানের দাবি, ড্রোনটি তাদের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমাতেই ছিল।

পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় উত্তেজনা চলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জোসেফ ডানফোর্ড জানান, ওই এলাকায় পানিসীমার সুরক্ষা দিতে একটি সামরিক জোট গঠনের পরিকল্পনা চলছে। এ পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন আদায়ে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের জোট গঠন করা সম্ভব হলে হরমুজ ও বাবুল মান্দেব প্রণালীতে জাহাজ চলাচল স্বাধীন ও নিরাপদ হবে। আমি মনে করি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিষ্কার হবে কোন কোন দেশ এ জোটে যোগ দিতে ইচ্ছুক। এরপর আমরা সরাসরি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে কাজ করবো, যাতে জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা বজায় রাখতে সক্ষমতা যাচাই করা সম্ভব হয়।’

জেনারেল ডানফোর্ড জানান, উদ্যোগের আকার কেমন হবে তা নির্ভর করবে কতটি দেশ এতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অংশীদারদের সংখ্যা যদি কম হয়, তবে আমাদের মিশনও ছোট হবে।’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমান্ড ও কন্ট্রোল’ জাহাজ সরবরাহ করবে আর কাছাকাছি এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে নৌকা চাওয়া হতে পারে। তবে এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত জাপান বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার নিজ দেশের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।