ডেঙ্গু দমনে যেভাবে সফল কলকাতা

ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ যখন ডেঙ্গুর প্রকোপে ভুগছে, তখন গত কয়েক বছর ধরেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে কলকাতা। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে কলকাতার নগর কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে এই দাবি করা হয়েছে। কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের দাবি, তারা সারা বছর ধরে নিবিড় নজরদারি চালায় - যাতে কোথাও জল না জমে থাকে। এর জন্য বহু কর্মীও যেমন রয়েছেন, তেমনই এবার এ কাজে আকাশে ওড়ানো হচ্ছে ড্রোনও।

মশা দমনে কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের অভিযান

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, একটা সময় ছিল যখন বর্ষা শুরু হলে কলকাতা কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে নামতো। কিন্তু ততদিনে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ত শহরের নানা অঞ্চলে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা কর্পোরেশন সারা বছর ধরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে শুরু করেছে। শহরের প্রতিটা হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা পরীক্ষাগারে রোগীদের কী কী রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, কী ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রতিদিনের হিসাব রাখা হয়, যাতে ডেঙ্গু রোগীর খোঁজ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

কলকাতার ডেপুটি মেয়র ও স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বিবিসিকে বলেছেন, তারা কয়েকটা স্তরে বছরভর নজরদারি চালান। তিনি জানান, "প্রথমত, ১৪৪ টা ওয়ার্ডের প্রতিটাতেই আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন করে কর্মী আছেন, যাদের মধ্যে একদল প্রচারের কাজ চালায়, আর অন্য দল জল জমছে কী না কোথাও, সেটার ওপরে নজর রাখে।" এর পাশাপাশি ১৬টি বরোর প্রত্যেকটার জন্য একটা করে র‍্যাপিড অ্যাকশন টিম রয়েছে। তাতে ৮ থেকে ১০ জন লোক থাকে সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে, গাড়িও থাকে তাদের কাছে। কোনও জায়গায় ডেঙ্গুর খবর পাওয়া গেলে অতি দ্রুত তারা সেখানে পৌঁছে এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।

নজরদারি চললেও এখনও অনেক বহুতল বা সরকারি ভবনের আনাচে কানাচে পানি জমে থাকতে দেখা যায় - যেগুলি ডেঙ্গুর রোগবাহী মশা এডিস ইজিপ্টাই জন্মানোর আদর্শ জায়গা। যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখছে কর্পোরেশনের নজরদারি কর্মীরা, সেই ভবনগুলির ওপরে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করার জন্য আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার জল পরিষ্কার করে দেওয়ার খরচ বাবদ বিল, বাড়ির বার্ষিক করের বিলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিচ্ছে কর্পোরেশন।

নজরদারি আরও ভালো করে চালানোর জন্য এবার আকাশে ড্রোন ওড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে, যা থেকে মশা মারার তেলও ছড়ানো যাবে। রোগ চিহ্নিতকরণ আর চিকিৎসার ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে কর্পোরেশন শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এত ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও কলকাতা শহরে ডেঙ্গুজনিত কারণে মানুষের মৃত্যু হয়। শহরের বেশ কয়েকটি নামী হাসপাতাল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া তথ্যেই তার প্রমাণ মিলেছে। কর্পোরেশন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য চেপে যায় বলে অভিযোগ ওঠে নানা মহল থেকে। তবে অতীন ঘোষ বলেছেন,  "ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে কী না, সেটা বলার কোনও অধিকারই নেই কর্পোরেশনের। সরকারের একটা ডেথ অডিট কমিটি আছে।"