জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক হবে শাক-সবজি ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস: জাতিসংঘ

মাংসের আধিক্য কমিয়ে শাক-সবজি ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মানুষ মনোযোগী হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী জাতিসংঘ। ভূমির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক নতুন প্রতিবেদনে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) এমন মত দিয়েছে। তারা বলছে, মাংস খাওয়া কমালে পশু চারণের জন্য ভূমির ব্যবহার কমবে এবং অপেক্ষাকৃত কম ভূমি ব্যবহার করে অধিকসংখ্যক মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হবে। যদি ভূমিকে আরও কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে তা দিয়ে মানুষ নিঃসৃত কার্বন অধিক হারে শোষণ করানো যাবে। তবে এর জন্য সবাইকে একেবারে নিরামিষভোজী হয়ে যেতে বলছেন না বিজ্ঞানীরা। যাদের খাদ্যাভ্যাসে মাংসের আধিক্য আছে তাদেরকে তা খাওয়া কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রতীকী ছবি
জলবায়ু ইস্যুতে কয়েক বছর পর পরই প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি)। সবশেষ ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর আইপিসিসি-এর পক্ষ থেকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং অব ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ ডিগ্রি শিরোনামে ৭২৮ পৃষ্ঠার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছিল,বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার জন্য খুব বেশি সময় হাতে নেই। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের সাপেক্ষে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বালানি,শিল্প,ভবন,পরিবহন ও শহরগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।’ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নতুন এক প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে আইপিসিসি।

আইপিসিসির জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ১০৭ জন বিজ্ঞানী। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনা শেষে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভ্যাসের ধরনের কারণে নজিরবিহীন হারে ভূমি ও পানির ব্যবহার হচ্ছে। আইপিসিসি বলছে, আগের চেয়ে খুব পরিমিত ও দক্ষভাবে ভূমি ব্যবহার করতে হবে। ফেরাতে হবে পশু-পাখির ভূমি। মাটির ক্ষয় ও মরুকরণ ঠেকাতে বড় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। জলবায়ু পরিবর্তনে এ দুইটিরও ভূমিকা রয়েছে।

মাঝে মাঝে জলবায়ু ব্যবস্থায় মাটির ভূমিকাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবে সমুদ্রের পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তর কার্বন মজুদের স্থান। গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং তা মাটিতে ছেড়ে দেয়। তবে বন উজারিকরণ ও কম কৃষি চর্চার কারণে তা আর সম্ভব হয় না। মাটির ক্ষয় হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। আইপিসিসি বলছে, নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ ও বৃক্ষ রোপণসহ ভালোভাবে জমির ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য কমানো যায় এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে জোরালো করা যায়।

আইপিসিসি বলছে, শাক-সবজি জাতীয় খাবারকে প্রাধান্য দিয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা হলে ২০৫০ সাল নাগাদ বেশ কয়েক লাখ বর্গ কিলোমিটার ভূমি মুক্ত করা যাবে। এতে বছরে ০.৭-৮.০ গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড কমানো যাবে।

যুক্তরাজ্যের এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক পেটে স্মিথ বলেন, ‘আমরা মানুষকে একেবারে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে বলছি না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের হাতে আর অন্য উপায় নেই। তবে এটা নিশ্চিত যে পশ্চিমা বিশ্বে আমরা অনেক বেশি মাংস খাচ্ছি।’