পুলিশের টিয়ারশেলে নিজ ঘরেই প্রাণ হারালেন কাশ্মিরি নারী

জুমার নামাজের পরে নিজ ঘরে দুই সন্তানকে পড়াচ্ছিলেন কাশ্মিরের বাসিন্দা রফিক সাগুর স্ত্রী ফাহমিদা। একই সময়ে কাছেই একটি বিক্ষোভ দমনে পুলিশের ছোড়া টিয়ারগ্যাস শেল ঢুকে পড়ে তাদের ঘরে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় ফাহমিদার। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র কাছে এভাবেই গত ৯ আগস্টের ওই ঘটনা বর্ণনা করেন রফিক। তবে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থায় কোনও বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দায়ী নয় বলে দাবি করে আসছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

noname

গত ৫ আগস্ট (সোমবার) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এর আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মিরে আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধাসামরিক বাহিনীর আরও ৮ হাজার সদস্য। উপত্যকায় কারফিউ জারির পাশাপাশি টেলিফোন-ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এতসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও সেখানে বিক্ষোভ ঠেকাতে পারছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার চারদিন পর কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের উপশহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের সময় নিজ ঘরে টিয়ারগ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফাহমিদা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রফিক সাগু ৯ আগস্ট দুপুরের সেই মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, শ্রীনগরে নিজেদের বাড়িতে দুই সন্তানকে পড়াচ্ছিলেন তার স্ত্রী ফাহমিদা। কাছেই বিক্ষোভকারী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ আবাসিক বাড়ি লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস ও পিপার শেল নিক্ষেপ শুরু করে।

সাগু বলেন, ‘এত ঘন ধোঁয়ায় ঘর পূর্ণ হয়ে গেছিল যে আমরা পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। ক্যানিস্টার (টিয়ারগ্যাসের শেল) বিস্ফোরণের সময় তিনটি বড় ধরনের শব্দ হয়। কোনোরকমে দুই সন্তানকে ঘরের বাইরে বের করে দিতে পারি আর চিৎকারের মধ্যে ও (স্ত্রী) দৌড়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে ঘরের বাইরে বের করে আনতে সক্ষম হই, কিন্তু ততক্ষণে সে অজ্ঞান হয়ে গেছে আর মুখ দিয়ে গাঁজলা বের হতে শুরু করেছে। রফিক জানান, একটা মোটরসাইকেলে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই কিন্তু ডাক্তাররা আর তার জ্ঞান ফেরাতে পারেনি।’

এএফপি’র হাতে পাওয়া মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, টিয়ারশেলের বিষাক্ত গ্যাস রফিকের স্ত্রীর ফুসফুসে ঢুকে পড়েছে। এ কারণেই সম্ভবত বিষাক্ত গ্যাসে ফুসফুসের ইনজুরিতে তার মৃত্যু হয়েছে।