ব্রাজিলে বলসোনারোর মেয়াদে পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে কমেছে জরিমানা

ব্রাজিলে পরিবেশসংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানা আদায়ের হার কমে যাওয়াকেও অ্যামাজন জঙ্গলে রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনায় দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে ব্রাজিলে বন উজাড়করণের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে। তখন থেকে কমে গেছে পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জরিমানা আদায়ের হারও। ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত জরিমানা হয়েছে ৬,৮৯৫টি ঘটনায় যা আগের বছরের তুলনায় ২৯.৪ শতাংশ কম। আগের বছর একই সময়ে ৯,৭৭১টি জরিমানা করেছিল ইবামা।

প্রতীকী ছবি
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি অ্যামাজনে। গবেষকদের মতে এই বন প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ডাকা হয়ে থাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ধীর করতে অ্যামাজনের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রেকর্ড হারে জ্বলছে ‘দুনিয়ার ফুসফুস’ খ্যাত ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গল। ইতোমধ্যেই পুড়ে গেছে সেখানকার সাত হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। আগুন নেভাতে ব্রাজিল সরকারের জোরালো তৎপরতা না থাকার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশটির দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশ অধিকারকর্মীরা। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থী সরকার কথিত উন্নয়নের নামে দৃশ্যত বন উজাড়ে উৎসাহ দিচ্ছে। আর তার ফলশ্রুতিতেই পুড়ছে দুনিয়ার ফুসফুস খ্যাত অ্যামাজন। 

ব্রাজিলের পরিবেশবিষয়ক সংস্থার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত জরিমানার পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ কমেছে। একই সময়ে ব্রাজিলে আগুন লাগার সংখ্যা বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। এসব আগুন লাগার ঘটনার কতগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন,  দায়মুক্তির সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বন ধ্বংস প্রক্রিয়াকে ‘সবুজ বাতি’ দেখাচ্ছে প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর প্রশাসন।

বিবিসি ব্রাজিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী,গত ১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ব্রাজিলিয়ান ইন্সটিটিউট অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড রিনিউয়েবল ন্যাচারাল রিসোর্সেস (ইবামা)  পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় জরিমানা কম করেছে। এক দশকের মধ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে কম জরিমানা করেছে সংস্থাটি। জরিমানার এ হার নিয়ে ইবামা কিংবা ব্রাজিলের পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে বিবিসি।

পরিবেশবাদীরা বলছেন,অ্যামাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে। অঞ্চলটিকে ঘিরে করা কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কথিত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য কৃষির বিস্তৃতি, বৈধ ও অবৈধ খনি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য ঘটছে অরণ্য বিনাশ। গড়ে উঠছে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত প্রকল্প। গত কয়েক দিনের আগুন কথিত উন্নয়নের জন্য অরণ্য বিনাশের গতিকেই জোরদার করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।