কাশ্মিরে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ খুলে দেওয়ার আহ্বান এইচআরডব্লিউ'র

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা পুনরায় চালু করার জন্য দেশটির সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি অবিলম্বের কাশ্মিরের অচলাবস্থা কাটিয়ে এই বিধিনিষেধ তুলে ফেলার আহ্বান জানায়।

2000px-Hrw_logo.svg

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণার মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে পাস হয় জম্মু-কাশ্মির পুনর্বিন্যাস বিল। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। এখনও অধিকাংশ অঞ্চলে রয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। জরুরি অবস্থা জারি থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

ভারতীয় সরকারের দাবি, গুজব ও সহিংসতা রোধে এই পদক্ষেপ নিয়েছৈ তারা। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী বৈষম্য, তথ্য অধিকার, বাকস্বাধীনতার মতো মৌলিক স্বাধীনতা হরণ বেআইনি। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি লেন, ‘ভারত সরকারের এই ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধে কাশ্মিরিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত তাদের।’ তিনি জানান, এই বিধিনিষেধে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে যার কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।

কাশ্মিরে অল্পকিছু ল্যান্ডলাইন এখনও কার্যকর রয়েছে। তবে সেটা শুধু সরকারি কাজে ব্যবহার হয়। কাশ্মিরিরা ফোন ব্যবহার করতে চাইলে অনেকগুলো নিরাপত্তা ধাপ পার হয়ে যেতে হয়। শ্রীনগরের বাসিন্দারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানায়, তারা এমন পরিস্থিতি ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, ‘আমরা কথা বলতে পারি না। এটা কি কারাগার না?

সেখানে সাংবাদিকরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন  না। ইন্টারনেট না থাকায় বন্ধ হয়ে আছে অনলাইন সেবা। একজন কাশ্মিরি অভিযোগ করেন তিনি সময়মতো তার কর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, এখন কি সরকার দেরীতে ট্যাক্স দেওয়ার শাস্তি মাফ করবে?

শ্রীনগরে কাশ্মিরের এক ডাক্তার বিক্ষোভ করে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দরিদ্রিরা সরকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ তাদের এই সেবা নেওয়ার জন্য ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট না থাকায় সেটা তারা ব্যবহার করতে পারছে না। তবে সরকারের দাবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অতীতে ওই অঞ্চলে গুজব ও সহিংসতা ছড়ানো হয়েছে।

201908asia_india_kashmir_internet_shutdown

ভারতীয় আইনে অনলাইন বিধিনিষেধ বৈধ। ২০১৭ সালের আগস্টে দেশটির সরকার টেলিকম সার্ভিসের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি আইন পাশ করে। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুযায়ী জনগণের স্বাধীনভাবে কথা বলা এবং তথ্য দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটসহ যেকোনও মাধ্যম ব্যবহারের অধিকার রয়েছে।  

মিনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনও ইন্টারনেটসহ বাকস্বাধীনতায় বিধিনিষেধকে সমর্থন করে তবে সেটা অবশ্যই সীমিত আকারে এবং বৈধ উদ্দেশ্যে করতে হবে। ভারত সরকারের উচিত জনগণের বিষয়টি বিবেচনা করা।