হংকং-এ চীনা সামরিক যানের চলাফেরা, বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড়ের আশঙ্কা

কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলার পর হংকং-এর অভ্যন্তরে চীনের বেশ কিছু সামরিক যানের চলাফেরা প্রত্যক্ষ করা গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এসব যান চলাচল করতে দেখার খবর সামনে আসার পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া দাবি করেছে,  বার্ষিক নিয়মিত রুটিনের অংশ হিসেবে হংকং সেনানিবাসের এসব যান চলাচল করেছে। সিনহুয়ায় প্রকাশিত খবরে সাঁজোয়া বাহন ও ট্রাকে করে সেনা সদস্যদের চলাচলের পাশাপাশি নৌবাহিনীর একটি জাহাজকে হংকং-এ প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সামরিক যানের এই গতিবিধি ওই অঞ্চলে বেইজিং-এর নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীদের ওপর বড় ধরণের ধরপাকড়ের আশঙ্কা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।হংকং-এর অভ্যন্তরে চীনের সামরিক যান চলাচল করতে দেখা গেছে

এক সময়কার ব্রিটিশ কলোনি হংকং এখন চীনের অংশ। ‘এক দেশ, দুই নীতি’র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন। গত ৯ জুন থেকে সেখানে কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ওই বিল অনুমোদন করা হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে এক পর্যায়ে ওই বিলকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। তবে এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সেখানকার নাগরিকরা।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ তুলে নিন্দা জানিয়ে আসছে বেইজিং কর্তৃপক্ষ। আগামী শনিবারও (৩১ আগস্ট) বড় ধরণের বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ওই অঞ্চলে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) চলাফেরা বিক্ষোভকারীদের ওপর বড় ধরণের ধরপাকড়ের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষ এই চলাফেরাকে নিয়মিত বার্ষিক চলাফেরার অংশ বললেও এর আগের দুটি একই ধরণের চলাফেরা হয়েছে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে। ওই সময়ে সিনহুয়ার খবরে চলাচল করা সেনা সদস্য ও সামরিক যানের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানানো হয়। তবে এবছরের প্রতিবেদনে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে হংকং সীমান্তের দুই পাশের সেনানিবাসে আট থেকে দশ হাজার সেনা সদস্য রয়েছে।বৃহস্পতিবার হংকং-এ নোঙ্গর করেছে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ

চীনা সেনাবাহিনী যখন এই চলাফেরা করলো তার আগে আগামী শনিবার বড় ধরণের বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বৃহস্পতিবার হংকং পুলিশ আয়োজকদের ওই বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়ে দিয়েছে।

হংকং-এর সিভিক পার্টির আইন প্রণেতা ডেনিস কোওক বলেছেন, রাজনৈতিক কারণেই এই সেনা চলাচল করানো হয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএইচকে-কে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটা পিএলএ-এর তরফে হংকং-এর মানুষদের জানান দেওয়া বা সতর্ক করা যে এসব মোতায়েন হতে পারে’। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি আর আবারও বলছি হংকং-এ সেনাবাহিনীর ব্যবহার হলে হংকং-এর পতন হবে আর এধরণের যেকোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে দিতে চাই’।

হংকং-এর বিক্ষোভের মধ্যে আগস্টের শুরুতে একটি প্রচারণামূলক ভিডিও প্রকাশ করে চীনের সেনাবাহিনী পিএলএ। ওই সময়েও বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর নিপীড়নের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে।