আসামে সংশোধিত খসড়া নাগরিক তালিকায় ছিল না স্ত্রীর নাম। তখন থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন রাজ্যের বাসিন্দা প্রীতিভূষণ দত্ত। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ৩ দিন আগে চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে তার আত্মহত্যার খবর জানা গেছে। আসামের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নাগরিক তালিকাকে ঘিরে সেখানে এ পর্যন্ত ৫৭ জন মানুষ আত্মঘাতী হয়েছেন।
১৯৫১ সালের পর পরিচালিত প্রথম আদম শুমারির মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের জুনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখকে সংশোধিত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। রয়টার্স নিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সে সময় জানিয়েছিল, রাজ্যের ৪০ লাখ, ৭ হাজার ৭০৭ মানুষ তালিকায় স্থান পায়নি। এদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী কিংবা মুসলমান ধর্মাবলম্বী। এ বছর জুনে তালিকায় আরেক দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০১৮ সালে সংশোধিত তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে থেকে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে বহিষ্কার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আসামের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সবমিলে বাদ পড়া ৪১ লাখেরও বেশি মানুষ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনটিকে ঘিরে উদ্বিগ্ন।
জানা গেছে, করিমগঞ্জ জেলার সোনাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রীতিভূষণ দত্ত সংশোধিত নাগরিক তালিকা স্থান পেলেও তার স্ত্রী নমিতা দত্তের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে রূপান্তরিত হওয়ার আতঙ্কে তিনি নিজের বাড়ির বারান্দায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন।
প্রতিবেশীদের কথায় স্ত্রীয়ের নাম এনআরসি তালিকায় উঠবে কি না, তা নিয়ে চরম উদ্বেগেই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। স্ত্রী নমিতার কথায়, প্রীতিভূষণ প্রায়ই বলতেন, যে তাকে নাকি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তার সবসময় মনে হয়, স্ত্রীকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হলেও তার সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি মানসিক সমস্যার দিকে এগোচ্ছে এই আশঙ্কা থেকেই তাকে চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যান নমিতা। তবুও সবসময় এনআরসির কাগজপত্রই নাড়াচাড়া করছিলেন তিনি।
ঘটনার দিন ২৭ আগস্ট বুধবার খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমোতে যান দুজনেই। তারপর দরজা খোলার শব্দ পান নমিতা। অনেকক্ষণ তাঁর স্বামীকে ফিরে আসতে না দেখে বাইরে গিয়ে স্বামীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন।