পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্কের জেরে মঙ্গলবার সরকারি দলের একজন এমপি-র দলত্যাগের ফলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ফিলিপ লি নামের ওই এমপি বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ছেড়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।noname
এর আগে সম্প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির আরেক এমপি সারাহ ওলাস্টোন-ও নিজ দল ছেড়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দেন। মঙ্গলবার তার সঙ্গে যুক্ত হন ফিলিপ লি। এর ফলে ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে একটি সংখ্যালঘু সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে।

নিজের পদত্যাগপত্রে বরিস জনসনের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন ফিলিপ লি। ১৯৯২ সালে কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেওয়া এ রাজনীতিক বলেন, বরিস জনসনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টিতে পপুলিজম (লোকরঞ্জনবাদ) ও ইংলিশ জাতীয়তাবাদের সংক্রমণ ঘটছে।

বরিস জনসনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী উপায়ে এবং অনৈতিকভাবে একটি ভঙ্গুর ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চেষ্টার অভিযোগ করেন ফিলিপ লি। তিনি বলেন, জনসনের অধীনে কনজারভেটিভ পার্টি লোকরঞ্জনবাদ ও ইংলিশ জাতীয়তাবাদের রোগে সংক্রমিত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি, গণতন্ত্র এমনকি রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, কোনও চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকরের চেষ্টা করছেন বরিস জনসন। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে তার সরকারের পক্ষে আর কোনও গণরায় নেই।

‘সর্বনাশা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের’ জন্য বরিস জনসন সরকারের চাপ প্রয়োগকে গণতন্ত্রের ওপর নজিরবিহীন হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেন জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ গণতন্ত্রবিরোধী ও অসাংবিধানিক। বরিস জনসনের কোনও ম্যান্ডেট, নৈতিকতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।

যুক্তরাজ্যের 'নো-ডিল' ব্রেক্সিট প্রস্তুতি বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভ স্বীকার করেছেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট নানা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তবে তার দাবি, এসব চ্যালেঞ্জ কমিয়ে আনা সম্ভব।

অন্যদিকে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি)-ও চুক্তিহীন ব্রেক্সিট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনও চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করলে যুক্তরাজ্যকে অন্তত ১৬ বিলিয়ন ডলারের রফতানি বাণিজ্য হারাতে হবে। আর এর পরোক্ষ ক্ষতির পরিমাণ হবে আরও অনেক বেশি।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন মনে করেন, বরিস জনসন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন। নিজ দলের সদস্যের ভোটে নির্বাচিত বরিস গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ নন। তিনি রাজনীতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুসরণ করছেন। তার কারণে জনগণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চাকুরিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর  নতুন নেতা তথা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সূত্র: আল জাজিরা।