ইরাকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে

ইরাকে ছয় দিন ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলমান বিক্ষোভে নিহত হয়েছে ১০৯ জন। আহতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
স্থানীয় হাসপাতাল ও নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, শুধু সোমবার সকালেই নিহত হয়েছে অন্তত ১২ জন। তবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় সূত্রগুলো নাম প্রকাশে রাজি হয়নি।

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে মধ্য বাগদাদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

বেকারত্ব, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে ১ সেপ্টেম্বর ওই বিক্ষোভ শুরু হয়। শুক্রবার আন্দোলনকারীদের সব দাবি মেনে নেওয়া এবং শনিবার বাগদাদে কারফিউ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল মাহদি। তবে বিক্ষোভকারীরা সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা দিয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাগদাদের রাজপথে নামেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলের অনুসারী না হয়েও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আওয়াজ নিয়ে রাজপথে নামেন আন্দোলনকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালিয়ে তাদের ওপর চড়াও হলে এই বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। বিশেষ করে শিয়া অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করে প্রশাসন।

সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে শনিবার রাজধানী বাগদাদে জারি করা কারফিউ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাগদাদের বাইরে অন্যান্য অঞ্চল থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কারফিউ প্রত্যাহার করা হলেও আন্দোলনের মূল কেন্দ্রস্থলে প্রবেশে বাধা দিয়েছে দাঙ্গা পুলিশ।

সংকটের মুখে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদর। এক বিবৃতিতে সরকারকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান তিনি। গত নির্বাচনে তার জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। সে সময় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরিচালনায় একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্ট অধিবেশন বয়কটের আহ্বান জানান এ শিয়া নেতা।