প্রথম পৃষ্ঠা কালো কালিতে ঢেকে প্রতিবাদ অস্ট্রেলীয় পত্রিকাগুলোর

সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলো। সোমবার দেশটির শীর্ষস্থানীয় সবকটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা ছিল কালো কালিতে ঢাকা। ওপর ডান পাশে লাল রঙয়ের একটি সিল মেরে দেওয়া হয়েছে। ওই সিলের মধ্যে সাদা হরফে লেখা রয়েছে ‘সিক্রেট’ বা ‘গোপনীয়’। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমিত করে সাম্প্রতিক এক আইনের প্রতিবাদে অভিনব এ প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে একই দিনে সব পত্রিকায় এমন প্রতিবাদ বিরল।noname
প্রতিবাদ শুধু পত্রিকার পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। রেডিও-টেলিভিশন, অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোও সমর্থন দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার অভিনব এ কর্মসূচিতে। বাদ যায়নি অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ, সরকারি অর্থে পরিচালিত ওয়েবসাইট অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এবিসি)-এর মতো সংবাদমাধ্যমগুলোও। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে তারাও এ সংক্রান্ত বার্তা প্রচার করছে। তাদের সম্মিলিত এ প্রচারণার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাইট টু নো কোয়ালিশন’ বা জানার অধিকার বিষয়ক জোট।

প্রতিষ্ঠানগুলো চাইছে, এ ধরনের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় এমন আইন বাতিলে সরকারের ওপর যেন চাপ তৈরি করা যায়। জনগণের পক্ষ থেকেই যেন এ চাপ অনুভব করতে পারে কর্তৃপক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতার উপযোগী পরিবেশ যেন নিশ্চিত করা হয়। মানহানি মামলার ক্ষেত্রে যেন একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকে।

এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেছেন নাইন এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাগ মার্কস। তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের নামে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই এ পদক্ষেপ।’

বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক সুরক্ষাকবচ না থাকায় অস্ট্রেলিয়ায় সাংবাদিকদের তথ্য বা প্রতিবেদনে প্রকাশে এমনিতেই নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যথাযথ সংবাদ প্রকাশ করেও রাষ্ট্রযন্ত্রের হয়রানির মুখে পড়তে হয় সাংবাদিকদের। বিশেষ করে সংবাদের সোর্স বা সূত্র নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। পড়তে হয় আইনি জটিলতার মুখে। ফলে বড় কোনও ইস্যুতেও নিজেদের প্রতিবেদনে অনেক তথ্য প্রকাশ করতে পারে না সংবাদমাধ্যমগুলো। অথচ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে ঠিকই তা প্রকাশিত হয়।

এ বছর শিশুদের ওপর যৌন সন্ত্রাস চালানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত ভ্যাটিকানের কোষাধ্যক্ষ কার্ডিনাল জর্জ পেলের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তবে আদালতের নির্দেশে অসি সংবাদমাধ্যমগুলো তার নাম প্রকাশ না করলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে ওই কার্ডিনালের নামসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমিত করে জারি করা সাম্প্রতিক এক আইন। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।