বাবরি মসজিদ মামলার রায় যেকোনও দিন, সতর্কতা জারি

ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার বাবরি মসজিদ মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা হতে পারে যেকোনও দিন। রায়কে ঘিরে সতর্ক বিজেপি সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে বিজেপি নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রায়ে মসজিদ থাকবে আশা প্রকাশ করে, আদালতের সিন্ধান্ত মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জমিয়াতে উলেমায়ে হিন্দ।

2_09_27_39_SC-to-hear-Ayodhya-dispute-case-today_1_H@@IGHT_582_W@@IDTH_970

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাবরি মসজিদের ভূমি তিন ভাগে ভাগ করে বণ্টনের আদেশ দেয়। আদালতের নির্দেশনায় মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড, নিরমাজি আখড়া আর রামনালা পার্টিকে সেখানকার ২ দশমিক ৭ একর জমি সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছিল। সম্প্রতি সেই শুনানি শেষ হয়েছে। ১৭ নভেম্বর দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের অবসর নেওয়ার আগে এ মামলার রায় ঘোষণা করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাতে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কয়েক দশক ধরে চলা বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সব রাজ্যকে সতর্ক থাকতে বলেছে কেন্দ্র। মামলার রায় ঘিরে অযোধ্যা ও উত্তরপ্রদেশের সংবেদনশীল অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৪,০০০ আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  ‘সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করতে নির্দেশনা দিয়ে সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশের কোথাও যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্যও বলা হয়েছে।’

F140sm1-001251-770x433

অযোধ্যার রায়কে কেন্দ্র করে সুরক্ষার আস্তরণে ঢাকতে চলেছে ভারতীয় রেল। রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি সাত পৃষ্ঠার নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, রেল স্টেশনের কাছাকাছি কোনও ধর্মীয় স্থান থাকলে সেখানেও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।

বুধবার মন্ত্রীদের সঙ্গে অযোধ্যা রায় ইস্যুতে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিনয়ের সঙ্গে রায় গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। বিতর্কিত মন্তব্যে যাতে শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ব্যাহত না হয়-সেদিকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মোদি। আগেরদিন, মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। পরদিন, জমিয়াতে উলেমায়ে হিন্দের প্রধান আরশাদ মাদানি বলেন, বাবরি শরীয়া আইন অনুযায়ী মসজিদ ছিল, থাকবে। রায় যাই হোক, সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৬শ' শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ১৯৯২ সালে ভেঙ্গে ফেলে উগ্রবাদী হিন্দুরা। তাদের বিশ্বাস সেখানে রামমন্দির ছিল। পরে আদালতে মামলা করা হয়। ২০১০ সালে ইলাহাবাদ আদালত, ২ দশমিক সাত সাত একর জায়গা বিবদমান পক্ষগুলোকে সমানভাগে দেয়ার রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে ১৪টি আবেদন জমা পড়ে। শুনানি শেষে এখন রায়ের অপেক্ষায় পুরো ভারত।