আসামের নাগরিকপঞ্জি মুসলিমদের দেশছাড়া করার হাতিয়ার: যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকৃতপক্ষে সেখানকার মুসলিমদের দেশছাড়া করার হাতিয়ার। এমনটাই মন্তব্য করেছে ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। শুক্রবার প্রকাশিত ‘ইস্যু ব্রিফ: ইন্ডিয়া’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে নিজেদের এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা তদারককারী এই মার্কিন প্রতিষ্ঠান।noname
২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত ভারতের আসাম রাজ্যের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিকবার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে বরাবরই এই নাগরিকপঞ্জিকে একটি ‘স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়া হিসেবে দাবি করা হয়েছে।

ইউএসসিআইআরএফ জানিয়েছে, আসামের এনআরসি নিয়ে ইতোমধ্যেই একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাদের উদ্বেগ সেখানকার বাঙালি মুসলমানদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে, নাগরিকত্বের জন্য একটি ধর্মীয় অপরিহার্যতা প্রতিষ্ঠা করতে এবং মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত করার উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দিল্লি।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বিশ্লেষক হ্যারিসন আকিনস। এতে বলা হয়, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিম্নমুখী প্রবণতার একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নাগরিকপঞ্জি। ২০১৯ সালের আগস্টে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর ভারতের বিজেপি সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা তাদের মুসলিমবিরোধী অবস্থানের প্রতিফলন।

ইউএসসিআইআরএফ জানিয়েছে, বিজেপি ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য একটি ধর্মীয় পরীক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে নাগরিক তালিকায় হিন্দু এবং কিছু ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বেঁচে যাবে। তবে বাদ পড়বে মুসলমানরা।

এর আগে গত অক্টোবরেও ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিপন্নতা ও আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২২ অক্টোবর মার্কিন কংগ্রেসের এক বৈঠকে আসামের ১৯ লাখ মানুষের রাজ্যছাড়া হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত ভারপ্রাপ্ত সহ সচিব অ্যালিস জি ওয়েলস সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো, গোরক্ষকদের নির্বিচারি কর্মকাণ্ড ও ধর্মান্তরবিরোধী আইনের প্রসঙ্গ তুলে ভারতকে প্রশ্নের মুখে ফেলেন।

কংগ্রেসে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক সাব-কমিটির সভায় অ্যালিস জি ওয়েলস বলেছেন, ‘আসামের ১৯ লাখ মানুষ দেশহীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন। কারণ, তাদের নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।’ এনআরসি নিয়ে ভারতের রাজনীতি সরগরম বহু দিন ধরেই। তবে তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুখ খোলাটা তাৎপর্যপূর্ণ।

শুধু এনআরসি নয়, ওই বৈঠকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসা ও বৈষম্য, বিশেষত মুসলিম ও দলিতদের ওপর গোরক্ষকদের তাণ্ডব, নয়টি রাজ্যে ধর্মান্তরবিরোধী আইনের মতো বিষয়গুলো নিয়েও ভারতকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলেছেন অ্যালিস। তার মতে, উল্লিখিত প্রত্যেকটি উদাহরণই ভারতে সংখ্যালঘুদের আইনি রক্ষাকবচের পরিপন্থী। অ্যালিস বলেন, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা ‌এবং অরক্ষিতদের রক্ষা করার কথা ভারত সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ‘অরক্ষিত’দের কথা বলতে গিয়েই আসামের নাগরিকদের কথা তোলেন তিনি। সূত্র: এনডিটিভি।