বাংলাদেশের অসহযোগিতাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রধান বাধা: মিয়ানমার

মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা-নেপিদো সহযোগিতার মধ্য দিয়েই কেবল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংকটের সমাধান সম্ভব। সরকারের মুখপাত্র জ্য হেতে দাবি করেছেন, ঢাকার অসহযোগিতাই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ। উল্লেখ্য, অতীতে দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে থাকায় বাংলাদেশকে দায়ী করেছিলেন।

noname

জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের জুনে নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণের তারিখ নির্ধারিত হলেও এখনও ওই চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাও দেশে ফিরে যায়নি।  

১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) নেপিদোতে জ্যে হেতে প্রত্যাবাসন কর্মসূচি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা কেবল বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সহযোগিতার মধ্য দিয়েই সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশ সহায়তা না করলে সমস্যা থেকেই যাবে। আপনাদের এটা বুঝতে হবে।’ মিয়ানমারের মুখপাত্র দাবি করেন, মূলত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার অভাবেই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে ৪১৫ জন রোহিঙ্গা ‘স্বেচ্ছায়’ বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরলেও তারা কেউ প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় ফেরেনি।

আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বলছে, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার প্রস্তুত নয়। তা সত্ত্বেও নেপিদোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের কারণেই প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না।

এরআগে ২০১৮ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় সু চি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের। মিয়ানমার তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকেই প্রত্যাবাসনকারীদের ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা কেবল সীমান্তে তাদের স্বাগত জানাতে পারি।’ একই বছর সেপ্টেম্বরে দুই দেশের সমঝোতার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় আবারও বাংলাদেশের ওপর দায় চাপান মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। সে সময় তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ২৩ জানুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে সে সময় বাংলাদেশ জানায়, তারা এখনও প্রস্তুত নয়। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর আমরা সমঝোতা স্বাক্ষর করেছিলাম। চুক্তিতে যেহেতু দুই দেশ সম্পর্কিত, তাই কখন প্রত্যাবর্তন শুরু হবে সে বিষয়ে আমরা একা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’

কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করে এলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না মিয়ানমার। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। সু চি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় অস্বীকার করে আসছেন।