‘নিখোঁজ সৌদি রাজকন্যার অবস্থান জানেন যুবরাজ’

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিক ইঙ্গিত করে রাজকন্যা বাসমাহ বিনতে সৌদের এক বন্ধু ও ব্যবসায়িক সহকর্মী দাবি করেছেন, নিখোঁজ ওই মানবাধিকার কর্মীর বর্তমান অবস্থান জানে রিয়াদের শাসক পরিবার। চলতি বছরের মার্চে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল বাসমাহর। তখন থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, আটক হয়ে তিনি বর্তমানে বিনা বিচারে গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রিয়াদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজকন্যার ওই ব্যবসায়িক সহকর্মী বলেন, শাসক পরিবার ঠিকই জানে বাসমাহ কোথায় আছেন।

Capture

দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবের সাংবিধানিক সংস্কার এবং মানবাধিকার প্রশ্নে সরব বাসমাহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব অঞ্চলের দুর্নীতি, মানবাধিকার এবং সম্পদের বৈষম্য নিয়ে কথা বলে ব্যাপক আলোচনায় আসেন বাসমাহ। সৌদি আরবে ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস, নারী অধিকারসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিও জানান তিনি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিবিসি অ্যারাবিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়েমেন যুদ্ধের ইতি টানতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান বাসমাহ। এরপর থেকে তাকে আর সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়নি।

রাজকন্যা নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করে তার এক বন্ধু এবং ব্যবসায়িক সহকর্মী বলেন, ‘দুটি সূত্র (পরিবার ও আইনজীবী) অনুযায়ী (রাজপরিবারের) এক নম্বর ব্যক্তি (মোহাম্মদ বিন সালমান) বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তবে আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি, তিনি জানেন। আমরাও জানতে চাই সে (বাসমাহ) কোথায় আছেন, কেন তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।’

21208310-7702561-image-m-21_1574183706786প্রশাসনের সমালোচনা করলেও রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অবশ্য কখনও বাসমাহকে সরাসরি কোনও কথা বলতে দেখা যায়নি। তবে তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও জনগণের হয়ে কথা বলার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি দেশটির শাসকরা। রাজকন্যা বাসমাহ’র মতো রাজতন্ত্রের সমালোচকরা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রোধের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজপরিবারের অনেকেই সমালোচনার কারণে যুবরাজের নির্দেশে হত্যা, গুম, কারাবন্দি ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে বিভিন্ন সময় খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বাসমাহর মার্কিন আইনজীবী লিওনার্ড বেনেট সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘ভ্রমণের দিনই তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। দুই মাস পর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ জানে না তিনি কোথায় আছেন। আমরা আসলে খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছি।’ আইনজীবী বেনেট আরও জানান, ‘কয়েক দফা ফোন করার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও তিনি তেমন কিছু বলেননি। বাসমাহর কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তার গন্তব্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভা হলেও যাওয়ার কথা ছিল তুরস্ক হয়ে। আঙ্কারার সঙ্গে শত্রুতামূলক সম্পর্ক থাকায় রিয়াদ বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখেছে।’
বাসমাহ নিয়মিত টুইটার ব্যবহার করলেও ফেব্রুয়ারির পর থেকে তিনি অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে নীরব রয়েছেন।

উল্লেখ্য, বাসমাহ সাবেক সৌদি রাজার ১১৫ সন্তানের একজন। এই পরিবারের একটি অংশকে বর্তমান রাজা সালমান ও তার পুত্রের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করা হতো। বর্তমান সৌদি রাজপরিবারের মোট ১৪ হাজার সদস্য রয়েছেন।