ক্ষমতায় গেলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইবে লেবার পার্টি

ব্রিটিশ উপনিবেশিক কালের প্রভাব খুঁজে দেখার প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রকাশ হতে যাওয়া নির্বাচনি ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতি থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে হাফিংটন পোস্ট। লেবার পার্টির দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে ওই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, উপমহাদেশের পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকা অনুসন্ধানের মতো অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখার পাশাপাশি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রতিশ্রুতিও থাকছে লেবার পার্টির ইশতেহারে।

noname

২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, উপনিবেশিক আমল নিয়ে গর্ববোধ করেন ৪৪ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক। আর ওই ইতিহাস নিয়ে লজ্জিত মাত্র ২১ শতাংশ। গত বছর করবিন ঘোষণা দেন লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশ ও দাসপ্রথার ইতিহাসকে যেভাবে স্কুলে পড়ানো হয়, তা ঢেলে সাজানো হবে। সেই ঘোষণার ধারাবাহিকতায় প্রকাশিতব্য লেবার পার্টির নির্বাচনি ইশতেহারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।  পার্টির দায়িত্বশীল সূত্র হাফিংটন পোস্টকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে।

বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন বহুদিন ধরে এই ধরনের তদন্তের দাবি করলেও যুক্তরাজ্যের কোনও সরকারই তা মেনে নেয়নি। ইতিহাসবিদ ও কূটনীতিকরা বলছেন অনুসন্ধান হলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাস নতুন করে লেখা হতে পারে।

১৯১৯ সালে অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগ এলাকায় জড়ো হওয়া স্বাধীনতাকামীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। এতে বহু ভারতীয় হতাহত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ বছর ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ পূরণ হয়েছে। নিরস্ত্র ভারতীয়দের হত্যার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তাতে কখনও সাড়া দেয়নি যুক্তরাজ্য। থেরেসা মে’র করজারভেটিভ সরকার সেই হত্যাকাণ্ডকে ‘ইতিহাসের কালো দাগ’ বলে বর্ণনা করলেও ক্ষমা চায়নি। তবে লেবার পার্টির ইশতেহারে ক্ষমা চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ বা পঞ্চাশের মন্বন্তরের ৭৫ বছর পূর্তি হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই দুর্ভিক্ষে মারা যায় দশ লাখের বেশি ভারতীয়। অভিযোগ রয়েছে ওই বছর ভারত থেকে ব্রিটিশ সরকার বিপুল খাদ্যশস্য রফতানি করায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। এই রফতানির পেছনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। লেবার পার্টির ইশতেহারে এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা ও বিতর্কের আশ্বাস থাকছে বলেও জানা গেছে।