ইরানে বিক্ষোভে শতাধিক নিহতের দাবি ভিত্তিহীন: রুহানি

ইরানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শতাধিক প্রাণহানির দাবিকে ‘কল্পনাপ্রসূত’ উল্লেখ করে নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এ আন্দোলনে বিদেশিদের ইন্ধন রয়েছে দাবি করেছে এর সমালোচনা করেছেন তিনি। বুধবার (২০ নভেম্বর) তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের বিক্ষোভের পর তা নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার।’

Capture

১৫ নভেম্বর ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারি রেশনে দেওয়া পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিলে সেদিন থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত দুই জন নিহত হয়। রাস্তা অবরোধ ছাড়াও বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রবিবার (১৭ নভেম্বর) বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইরানের আধা সরকারি ফার্স নিউজ তিন দিনের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ১২ জন বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে এ বিক্ষোভে ১০৬ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২১টি শহরে বিক্ষোভের সময় অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিশ্বাসযোগ্য খবর, নিশ্চিত হওয়া ভিডিও এবং মানবাধিকারকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি জানিয়েছে ওই সংস্থাটি। তাদের দাবি, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কিছু কিছু খবরে নিহতের সংখ্যা ২০০ জনের মতো। তাদের এ দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অনুমাননির্ভর’ উল্লেখ করে তা উড়িয়ে দিয়েছে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশন। আর এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সঙ্গে ওই ‘দুর্বৃত্তদের’ (বিক্ষোভকারী) যোগাযোগ রয়েছে দাবি করে এর তীব্র সমালোচনা করেছে তেহরান।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফার্স নিউজের খবরে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের আলবোর্জ প্রদেশে বিক্ষোভের সময় বেশ কয়েকজন দ্বৈত নাগরিককে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। আটককৃতদের মধ্যে জার্মানি, তুরস্ক, আফগানিস্তানের দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইরানের অবকাঠামো ধ্বংস ও নাগরিক আন্দোলনে নাশকতা চালাতে অর্থায়ন করেছে বিদেশি সংস্থাগুলো। এই দ্বৈত নাগরিকদের কাছে নাশকতার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ছিল। তবে এর প্রমাণ হিসেবে কিছু দেখায়নি বা বিস্তারিত জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি’কে রুহানি জানিয়েছেন, ‘ঐতিহাসিক পরীক্ষায় আবারও জয়ী হয়েছে ইরানের জনগণ। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও এই পরিস্থিতি নিয়ে কোনও শত্রুকে কোনও ধরনের সুবিধা নিতে দেবে না তারা, তা আবারও তারা দেখিয়েছেন।’ এ সময় তিনি আরও বলেছেন, ‘আপনি যে স্বতঃস্ফূর্ত (সরকারপন্থীদের) বিক্ষোভ দেখছেন তা হল ইরানি জনগণের শক্তির সবচেয়ে বড় নির্দেশক।’

মঙ্গলবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘বিক্ষোভটা একটি নিরাপত্তা ইস্যু, এটা জনগণের আন্দোলন নয়। এটাকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’